দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের অমিত সম্ভাবনা বিরাজ করছে। চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক বাণিজ্যের বিশাল এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর বিষয়টি আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে আঞ্চলিক বাণিজ্য আরও জোরদারে সদস্য দেশগুলোকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। বুধবার বিকেলে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সার্কের গুরুত্ব শীর্ষক অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি প্রধান আকর্ষণ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার অনন্য সুযোগ রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর। এই অঞ্চলের তরুণদের দক্ষ মানবসম্পদে রুপান্তরিত করতে পারলে সেটি এই অঞ্চলের জন্য আশির্বাদ বয়ে আনবে। দক্ষিণ এশিয়ার বিশাল এই ভোক্তা বাজার আমাদের জন্য এক ধরণের আশির্বাদ। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। এই অঞ্চলের বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করা এখন সময়ের দাবি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, নতুন বাজারে প্রবেশ, পণ্য বৈচিত্র্যকরণ, আন্তঃসীমান্ত ব্যবসায়িক সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ বাণিজ্যের বাধা সমুহ দূর করার মাধ্যমে সার্কের বাণিজ্যকে আরও সমৃদ্ধ করতে কাজ করতে পারে বেসরকারী খাত। সার্ক চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির বিজনেস টু বিজনেস মিটিং পারস্পরিক বাণিজ্য জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এসসিসিআইকে তার ওয়ার্কিং গ্রুপগুলোকে আরও সক্রিয় করার পাশাপাশি পরিবহন এবং লজিস্টিক অবকাঠামো, / বাণিজ্য পদ্ধতির সমন্বয়, / ডিজিটাল প্রচার, / আঞ্চলিক সরবরাহ ব্যবস্থা এবং পর্যটন সহ বেসরকারি পরিষেবা খাতের বিদ্যমান সুযোগগুলো কাজে লাগাতে চাইলে সার্ক চেম্বারের সক্ষমতা আরও জোরদার করতে হবে মন্তব্য করেন তিনি।
স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্ক স্থাপন করা গেলে এই অঞ্চল হতে পারে বিশ্বের অন্যতম গতিশীল ও উদীয়মান শক্তি। এই লক্ষ্যে শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন এবং সংস্থাগুলোকে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সার্ক সিসিআই (শ্রীলঙ্কা) এর প্রাক্তন সভাপতি রুয়ান এদিরিঙ্গে বলেন,সার্কভুক্ত দেশ সমুহের বিপুল জনশক্তি,বিশাল বাজার,অর্থ এবং পর্যাপ্ত খনিজ সম্পদ ও কাঁচামাল রয়েছে। অথচ এসব সম্পদকে আমরা এখনও কাজে লাগাতে পারিনি। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে বাণিজ্য সম্প্রসারণে সার্ক চেম্বারের সদস্যদের নিজ নিজ দেশের ব্যবসায়ী নেতৃত্ব এবং সরকারের সাথে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধাগুলো দূর করতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ সময় সার্ক সিসিআই (পাকিস্তান) এর সহ-সভাপতি আঞ্জুম নিসার বলেন, অন্যান্য আঞ্চলিক জোটগুলো তাদের বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে জোড়ালোভাবে কাজ করছে। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে আমরা এখনও সার্কের মতো এত সম্ভাবনাময় একটি জোটকে কাজে লাগাতে পারিনি। পর্যটন, কৃষি, মৎস্য, শিল্প, মানব উন্নয়নসহ আরও অনেক ক্ষেত্রে আমাদের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এই অঞ্চলে বাণিজ্যের সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে নিজ নিজ দেশের সরকারকে আরও তৎপর করতে কাজ করতে হবে।
ইউএন ইএসসিএপি এর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া অফিসের ডেপুটি হেড এবং সিনিয়র ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্সের কর্মকর্তা ড. রাজন সুদেশ রত্ন অনুষ্ঠানে অতিথি বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম. মাশরুর রিয়াজ। মালদ্বীপের প্রাক্তন মন্ত্রী মরিয়ম শাকিলা, সার্ক সিসিআই (শ্রীলঙ্কা) এর প্রাক্তন সভাপতি রুয়ান এদিরিঙ্গে, সার্ক সিসিআই (নেপাল) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং নেপাল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফএনসিসিআই) সাবেক সভাপতি চন্ডি রাজ ঢাকাল, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় বসু, আফগানিস্তান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য জানাকা সিদ্দিকী, এফবিসিসিআই এর সহ-সভাপতি, পরিচালকবৃন্দসহ বাংলাদেশ ও সার্কভুক্ত দেশসমুহের ব্যবসায়ী নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
Comments