সাংবাদিক ও বরেণ্য কথাসাহিত্যিক রাহাত খানের ৮৬তম জন্মদিন আজ । ১৯৪০ সালের ১৯ ডিসেম্বর, বর্তমানের কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলার জাওয়ার নামক গ্রামে, প্রায় ছ'শ বছরের পুরনো সম্ভ্রান্ত ও ঐতিহ্যবাহী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রাহাত খান।
রাহাত খান ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর যোগ দেন শিক্ষকতা পেশায়। ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজ, জামালপুর আশেক মাহমুদ কলেজ, জগন্নাথ কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করেন।
১৯৬৯ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে সহকারী সম্পাদক হিসেবে সাংবাদিক জীবনের শুরু। ১৯৯৬ সালে ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও পরে পত্রিকাটির সম্পাদকও হন রাহাত খান। ইত্তেফাকে উপসম্পাদকীয় কলামে সুহৃদ ছদ্ধনামে 'চতুরঙ্গ' কলামটিকে তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন এক অনন্য উচ্চতায়।
সময়ের হিসেবে ষাটের দশকের লেখক রাহাত খান গদ্য রচনায় ছিলেন, অনবদ্য, ভিন্নমাত্রিক এবং অসাধারণ। তার উত্তুঙ্গস্পর্শি উচ্চতা সাহিত্যে তাকে বিশিষ্ট এবং আলাদাভাবে চিহ্নিত করে। তার শুরু গল্প লেখা দিয়ে। পরে উপন্যাস। তার গল্পগ্রন্থ অনিশ্চিত লোকালয়, ভালো মন্দের টাকা, অন্তহীন যাত্রা ইত্যাদি। উপন্যাস অমলধবল চাকরি, এক প্রিয় দর্শিনী, ছায়া দম্পতি, হে শূন্যতা, হে অনন্তের পাখি, সংঘর্ষ, মধ্য মাঠের খেলোয়াড়, হে মাত বঙ্গ, দুখিনি কমলা, হে মহা শূন্যতা। শিশুদের জন্যও তিনি লিখেছেন। তার লেখা কিশোর উপন্যাস ‘দিলুর গল্প’ আজও শিশুদের মাঝে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিশোর উপন্যাস দিলুর গল্প ইত্যাদি।
রাহাত খান ছিলেন মৃদুভাষী, নিরহংকার ও নিভৃতচারী। গভীর মানবপ্রেমে উৎসারিত এক ব্যক্তি। ছিলেন আধুনিক ধারার এক অনন্য লেখক। রাহাত খান সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের জন্য মাত্র ৩৩ বছর বয়সে অর্জন করেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৩)। এছাড়াও রাষ্ট্রীয় একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
১৯৭৯ সালে সুফি মোতাহার হোসেন অ্যাওয়ার্ড, মাহবুবুল্লাহ জেবুন্নেসা ট্রাস্ট অ্যাওয়ার্ড, আবুল মনসুর মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড, ১৯৮২ সালে হুমায়ুন কাদের মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড, সুহৃদ সাহিত্য অ্যাওয়ার্ড, ট্রাই সাহিত্য অ্যাওয়ার্ড ও চেতনা সাহিত্য অ্যাওয়ার্ড পান।
২০১৩ সালে তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় দৈনিক বর্তমান। তিনি প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন।
বরেণ্য সাংবাদিক ও কথা সাহিত্যিক রাহাত খান ২৮ আগস্ট ২০২০ রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিজ বাসাতেই শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ।
আমরা একজন রাহাত খানকে হারিয়েছি আর বাংলা সাহিত্য হারিয়েছে এক শক্তিমান কথাশিল্পী ও ধীমান সাংবাদিককে। সৃজনশীল মানুষের মহৎ কাজের মৃত্যু নেই। রবীন্দ্রনাথের সোনার তরী গুণীজনের সৃষ্টিকে বয়ে বেড়ায় কাল থেকে কালান্তরে। রাহাত খান থাকবেন আমাদের অন্তরে আর লেখক রাহাত খান পাঠকের হৃদয়ে।
Comments