সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
Monday, 29 April, 2024

বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্য আমার অনেক কিছু করার আছে - স্টেট সিনেটর সাদ্দাম সেলিম

ঢাকা ডিপ্লোম্যাট
  21 Jan 2024, 20:08
বিজয়ের পর শুভেচ্ছা বক্তব্যরত সাদ্দাম সেলিম .........................................................................ছবি: ঢাকা ডিপ্লোম্যাট

বাংলাদেশী আমেরিকান সাদ্দাম সেলিম। শৈশবে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি’র পার্শ্ববর্তী রাজ্য ভার্জিনিয়া থেকে স্টেট সিনেটর নির্বাচিত হয়েছেন! ভার্জিনিয়া থেকে তিনিই প্রথম বাংলাদেশী মুসলিম আমেরিকান যিনি স্টেট সিনেটর নির্বাচিত হলেন। আমরা তার নির্বাচনী সফলতা নিয়ে কথা বলেছি। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমাদের ওয়াশিংটন ডিসি প্রতিনিধি শাহিদ মোবাশ্বের।

ঢাকা ডিপ্লোম্যাট: আপনার জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং শিক্ষাজীবন নিয়ে কিছু বলবেন।

সাদ্দাম সেলিম: আমার নাম সাদ্দাম সেলিম। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানার নবগ্রামে আমার জন্ম। যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর প্রথমে আমরা প্রথমে ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাস শুরু করি। এরপর বাবা-মাসহ ভার্জিনিয়ায় আসি এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করি। আমি ভার্জিনিয়ার জর্জ মেসন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই। সেখান  থেকে জনপ্রশাসন বিষয়ে এ স্নাতক ও মাস্টার্স সম্পন্ন করি। আমার শিক্ষার পুরোটাই ছিল জনপ্রশাসন ও সরকার বিষয় নিয়ে। আর সেকারণেই প্রশাসন আর সরকার ব্যবস্থায় আমার বিশেষ আগ্রহ!

ঢাকা ডিপ্লোম্যাট: আপনার কর্মজীবন নিয়ে কিছু বলবেন কি?

সাদ্দাম সেলিম: আমি বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছি।প্রথমে আমি একটি ব্যাংকে এবং তারপর একটি অ্যাকাউন্টিং ফার্মে কাজ করেছি। এরপব আমি একটি আর্থিক ব্যবস্থাপনা পরামর্শক সংস্থায় কাজ শুরু করি। সেখানে আমরা ফেডারেল চুক্তি, নিরীক্ষা ও সম্মতি গ্রহণের কাজ করি এবং অ্যাকাউন্টিং পরিসেবা প্রদান করে থাকি। আমি এই কোম্পানির একজন ব্যবস্থাপক যেখানে ১৫-২০    জনের একটি টিমের তত্ত্বাবধান করি।

ঢাকা ডিপ্লোম্যাট: রাজনীতিতে এলেন কীভাবে?

সাদ্দাম সেলিম: আমি কখনো রাজনীতিতে আসার কথা ভাবিনি। তবে যখন কংগ্রেসে, ফক্স নিউজে দেখি বা বিভিন্ন রেডিও অন করলেই দেখি - আমাদের সম্প্রদায় তথা মুসলিম সম্প্রদায় আক্রমণের শিকার। এসব দেখে বা শুনে সবাই শুধু মুখেই বলে যে আমাদের কিছু একটি করতে হবে। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনা। কখনও কখনও আমি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়তাম এই ভেবে যে আমাদের ওপর হয়তো হামলা হবে! তবে সততায় দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলাম আমি। এক পর্যায়ে ভাবলাম যে, আমি আমাদের কমিউনিটির লোকেদের, মুসলিম কমিউনিটিকে এবং আরব আমেরিকান কমিউনিটিকে সাহায্য করতে পারি। আর সাহায্য করার এই প্রত্যয় নিয়ে ২০১৯ সাল থেকে আমি স্থানীয় সরকার, স্কুল বোর্ড, স্টেট ডেলিগেট ও স্টেট সিনেটরদের নির্বাচনে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ শুরু করি। অর্থাৎ নির্বাচনে বিজয়ী হতে তাদের সাহায্য করছি। ইলেকট্রনিকসহ বিভিন্নভাবে এই কাজ করতে গিয়ে পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া শিখে নেই। এরপর আমি রাজ্য সিনেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ  পাই। যারা নির্বাচনী প্রক্রিয়া জানেন না তারা কিন্তু কখনই এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় টিকে থাকতে পারবেনা। আপনি যখন প্রক্রিয়াটি শিখবেন হাজার হাজার মানুষ আপনাকে চিনবে। আপনার নাম কি, আপনি কি করেন, আপনি কি করেন না ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি সেখানে গিয়েছিলাম শিখতে এবং শিখেছি। আবার অনেকেই জনগণের কল্যাণে প্রণীত নীতিমালার কথা চিন্তা করে না বা সেদিকে খেয়ালও রাখে না। তাই কেউ যদি আমাদের সম্পর্কে চিন্তা না করে বা আমাদের জন্য কল্যাণকর নীতিমালার কথা না ভাবে তবে আমি তাদের জন্য নীতিমালা করবো - এই চিন্তা থেকেই রাজনীতির এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নিজেকে সম্পৃক্ত করি।

ঢাকা ডিপ্লোম্যাট: এই নির্বাচনে কিভাবে বিজয়ী হলেন?

সাদ্দাম সেলিম: আমি মনে করি বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে জনগণের কাছে যেতে হয়। বন্দুক সহিংসতা, আবাসন বা গণশিক্ষার মত বিষয়গুলো জনগণের সরব আলোচনায় ছিল। বন্ধকী ঋণ পেতে আমাদের অনেক বেশী ডাউন পেমেন্ট দিতে হয়। সুদের হার অনেক বেশি। আমি জনগণের কাছে এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছি। তাদের বলেছি - আমি এই সমস্যাগুলো কমাতে চাই। আমি বন্দুক সহিংসতা প্রতিরোধ করতে চাই, আমি শিশুদের শিক্ষার বিষয়ে সাহায্য করতে চাই। আমি আমার কথায় অটল আছি। আমি জনগণের সাথে নিজেকে সংযোগ স্থাপন করেছি। এখানকার সিনেটর গত ১৬ বছর ধরে এই পদে রয়েছেন। তার কর্মকান্ডের কোন চ্যালেঞ্জ হয়নি। চ্যালেঞ্জ না থাকলে জবাবদিহিতা থাকে না। কেউ অপরাধ করলেও জবাবদিহিতা থাকেনা। তাই ভাবলাম - কেন মানুষ সংযুক্ত হচ্ছে না? সাধারণ জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থকে আমি দেখেছি। আমি তাদের দূরত্ব বজায় না রাখতে বলেছি। সবাইকে বলেছি - আমি আপনাদের সাহায্য করব। আমি আমার কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা দিয়ে এইসব করছি। প্রাইমারিতে আমার প্রতিপক্ষের আট হাজার ভোটের বিপরীতে দশ  হাজার মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে। এরপর সাধারণ নির্বাচনে ৩৮ হাজার ৭২৭ (৬৮ শতাংশ) মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে। বিপরীতে আমার প্রতিপক্ষ পেয়েছেন ১৭ হাজার ৮৭৯ (৩২ শতাংশ) ভোট। আমি বলেছি - আমি শ্রমিক শ্রেণীকে সাহায্য করতে চাই। আমি সাধারণ মানুষকে সাহায্য করতে চাই যারা প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে রাত 10টা পর্যন্ত কাজ করে। আমি ধনী ব্যক্তিদেরও সাহায্য করতে চাই। আমি এসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।

ঢাকা ডিপ্লোম্যাট: যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের মূল শক্তি ও দুর্বলতাগুলো কী কী?

সাদ্দাম সেলিম: যুক্তরাষ্ট্রের মত অন্যান্য দেশেও গণতন্ত্র বিদ্যমান। অন্যান্য দেশের গণতন্ত্র সীমিত এবং  সীমাবদ্ধ। কিন্তু এ দেশের গণতন্ত্রের শক্তিশালী দিক হলো যে এখানে সবাই ভোটদান প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে, সবাই ভোট দিতে পারে। ধরুন, আপনার দৃষ্টিতে পাবলিক শিক্ষা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আপনি আপনার পছন্দের স্কুল বোর্ডের সদস্যদের ভোট দিতে পারেন। আপনার এলাকার রাস্তা বা ট্রাফিক লাইটের সমস্যা আছে আপনি আপনার পছন্দের সুপারভাইজারকে ভোট দিতে পারেন। এলাকার স্কুল পরিবহন, বাসস্থান বা পাবলিক ফান্ডিং নিয়ে সমস্যা রয়েছে আপনি আপনার পছন্দের সিনেটরকে ভোট দিতে পারেন। অর্থাৎ আপনি প্রতিটি স্তরে ভোট দিতে পারেন। প্রত্যেকের ভোটের অধিকার গণতন্ত্রের অন্যতম শক্তি যা এদেশে আছে। গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় বিষয় হল আপনি ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে নিরাপদ বোধ করতে পারেন। ভোটদানে কোনো বাঁধা নেই। আবার আপনি না চাইলে কেউ আপনাকে ভোটদানে বাধ্য করবেনা। এটাও গণতন্ত্রের অন্যতম সৌন্দর্যের একটি দিক। সেই সঙ্গে এদেশের গণতন্ত্রের কতিপয় দুর্বল দিকও রয়েছে। যেহেতু সবাই ভোট দিতে পারে সেকারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষও ভাল কিছুর বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারে। আর সেটা হলে ভাল নীতিগুলি বাস্তবায়ন হয় না। আরেকটি দুর্বলতা হল যোগ্য-অযোগ্য যে কেউ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। আর এ কারণেই ভালো মানুষের চেয়ে অনেক খারাপ আর অযোগ্য মানুষও নির্বাচিত হয়।আর এসব নির্বাচিত অযোগ্য মানুষ যদি ভালো কাজ না করে তবে জনগণের ভোটে তারা পরাজিত হয়ে চলে যান। সেকারণেই বলি গণতন্ত্রের দুর্বল ও শক্তিশালী উভয় দিকই রয়েছে। আবার একই সঙ্গে এটাও ঠিক যে গণতন্ত্রে দুর্বলতা ও শক্তিশালী দিক ছাড়া ভারসাম্য থাকে না।  আর আমি মনে করি আমেরিকায় এই সমান ভারসাম্য রয়েছে। আর এই ভারসাম্যের প্রয়োজনেই প্রতি দুই বছর, চার বছর আর ছয় বছরে আমরা পছন্দ প্রার্থীকে ভোট দিতে পারি। আর আমেরিকার গণতন্ত্রে সবচেয়ে বড়  বৈশিষ্ট্য হল এখানে জবাবদিহিতা আছে।

ঢাকা ডিপ্লোম্যাট: আপনি এখন ভার্জিনিয়ার স্টেট সিনেটর। সেক্ষেত্রে আপনার কাজের ক্ষেত্রগুলো কী হবে?

সাদ্দাম সেলিম: একজন স্টেট সেনেটর হিসেবে আমার কাজ করার ক্ষেত্র হবে পুরো রাজ্যের জন্য বাজেট, বিচার বিভাগীয় নিয়োগ, পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন ফান্ডিং, পাবলিক এডুকেশনের জন্য নীতিমালা তৈরি, দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে এমনসব নীতিমালা তৈরি করা ইত্যাদি। ধরুন আপনি আমার এলাকার বাসিন্দা এবং আপনি ভাঙ্গা রাস্তায় প্রতিনিয়ত আটকে থাকেন! সেক্ষেত্রে আমি স্টেট সিনেটর হিসেবে স্থানীয় সুপারভাইজারকে ডেকে এই পথটি ঠিক করার জন্য অনুরোধ করব। সুতরাং ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথের প্রতি আমার দায়িত্ব তাদের অর্থনীতি, প্রযুক্তি, পরিবহন, পাবলিক শিক্ষা, যোগাযোগ ইত্যাদি বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করা। তবে অভিবাসন বা আন্তর্জাতিক ইস্যুতে আমার কিছু করার নেই। ওসবের দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্র সিনেটরদের। আমরা কাজ স্টেট পর্যায়ে সীমাবদ্ধ।  ধরুন আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। আপনার বয়স ১৬ বছর। এই বয়সে লাইসেন্স পাওয়ার বিষয়টি স্টেট নির্ধারণ করে। আপনি স্টেটে যাই করেন না কেন রাষ্ট্র তা নির্ধারণ করবে। আপনি একটি দোকান নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেন বা আপনি একটি লটারির টিকিট কিনলেন অথবা মাছ ধরার লাইসেন্স কিনেছেন। আমরা এসব বিষয়ের বাস্তবায়নে নীতিমালা তৈরি করতে পারি। এসবই আমরা কেবল এই ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ-এ চালাতে পারি। আমাদের আর্লিংটনে অ্যামাজনের সদর দফতর হচ্ছে। এটির সকল সুযোগ-সুবিধাদি দেখার দায়িত্ব এই স্টেট সিনেট এবং সাধারণ পরিষদের। নতুন কোন কোম্পানি আসলে সেটার দায়িত্বও আমাদের । আমাদের আছে - স্টেট কর্পোরেশন কমিশন, অপটোমেট্রিস্ট কমিশন, মেডিকেল বোর্ড ইত্যাদি। আমরা এসব কমিশনের জন্য লোক নিয়োগ করি। এ সবই স্টেট সিনেটদের কাজ। আমাদের গভর্নর একজন কোম্পানির সিইও এর মত। তিনি সবকিছু পরিচালনা করেন। তবে তিনি আমাদের নির্দেশনা নিয়ে থাকেন।

ঢাকা ডিপ্লোম্যাট: এখানকার বাঙালি সম্প্রদায়ের জন্য, আপনার কি কিছু করার আছে?

সাদ্দাম সেলিম: হ্যাঁ, আপনি জানেন এই স্টেটের বিভিন্ন জায়গায় অনেক বাংলাদেশি কমিউনিটির লোকজন আছে। বিশেষত লাউডন, ফেয়ারফ্যাক্স, আর্লিংটন আর আলেকজান্দ্রিয়ায় । আমি আমার অবস্থানে থেকে বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্য দরজা খুলতে পারি। আমি আমাদের কমিউনিটির সাথে যোগাযোগ বাড়াতে পারি। আরো বেশী সংখ্যক বাংলাদেশীদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করতে বড় ইভেন্ট আয়োজন করতে পারি। বাংলাদেশী কমিউনিটির কেউ ভাল ব্যবসা করছে বা কমিউনিটির লোকজন অভূক্তদের খাবার দিচ্ছে বা চ্যারিটিতে সাহায্য করছে -  এ বিষয়গুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে আমি এদেশের মানুষের নজরে আনতে চাই এই বলে যে, এই কমিউনিটির মানুষ ভাল কাজ করছে। আবার কারও লাইসেন্স সংক্রান্ত কোন সমস্যা থাকলে  আমাদের কল করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আমরা ডিপার্টমেন্ট অব মোটর ভেহিকলস-এর কমিশনারকে কল করব এবং আপনাকে সাহায্য করতে বলবো। আমি আমার সম্প্রদায়ের জন্য এসব করবো। আর বাংলাদেশী কমিউনিটিও আমাকে সাহায্যকারী হিসাবে ব্যবহার করতে পারে। আর এধরণের সাহায্য করা আমার জন্য মহান কাজ হবে!

ঢাকা ডিপ্লোম্যাট: আপনি এদেশের রাজনীতিতে আরো বেশী বাংলাদেশী সম্প্রদায়কে কিভাবে সম্পৃক্ত করতে পারেন?

সাদ্দাম সেলিম: আমিই প্রথম বাংলাদেশি আমেরিকান হিসেবে এই ভার্জিনিয়া স্টেটের সিনেটর নির্বাচিত হয়েছি। এদেশে আমাদের বাংলাদেশিরা পেশা হিসেবে শুধু ডাক্তার, আইটি ইঞ্জিনিয়ার আর আইনজীবীকেই বেশী পছন্দ করেন। আমি তাদের  বলতে চাই - এসব পেশার বাইরেও রাজনীতিসহ আরো অনেক পেশা রয়েছে যা তারা গ্রহণ করতে পারে। তাদের বলতে চাই আপনি যে পেশাতেই কাজ করেননা কেন আপনিও কিন্ত রাজনীতিতে আসতে পারেন। স্টেট সিনেটে নির্বাচন করতে গিয়ে আমি চার বছরে পুরো প্রক্রিয়াটি শিখেছি। আমি এই অভিজ্ঞতায় আরও বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের সাথে জড়িত হতে চাই। আমি সবার জন্য আমার অভিজ্ঞতার দুয়ার খুলে দিতে চাই। আমার অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশী কমিউনিটির আরও বেশী সংখ্যক মানুষ এদেশের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে সফল হতে পারে। আমি যদি আমাদের বাংলাদেশী সম্প্রদায়ে জন্য এই কাজটি করি তবে তারাও রাজনীতিতে জড়িত হবে। অন্যান্য বাংলাদেশীও স্কুল বোর্ড আর কাউন্টিসহ বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে। একজন স্টেট সিনেটর হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসকে আমি এই স্টেট লেভেলে স্বীকৃতি দিতে চাই। আর স্বীকৃতির সেই দিনটি হবে আমাদের বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্য বড় আনন্দের! আমি যদি সেই দিনটিকে স্বীকৃতির ব্যবস্থা করতে পারি তবে আগামী চার বছরে আমাদের সম্প্রদায় আরও উন্নতি করবে। আমাদের সম্প্রদায়ের সরব উপস্থিতি এখানকার মানুষ দেখতে  পাবে। সমস্যা হল অন্যান্যরা আমাদের উপস্থিতি দেখতে পায় না। আমি কোন পার্কে আমাদের বাংলাদেশী-পিঠা, বিরিয়ানিসহ বিভিন্ন খাবারের উপর মেলা করতে চাই। আমরা যদি এ ধরণের মেলা উদযাপন করতে পারি তবে আমাদের স্টেটের অন্যান্য নির্বাচিত কর্মকর্তা আমাদের স্বীকৃতি দেবেন। আবার আমরা যদি এটা করি তাহলে আমাদের সম্প্রদায়ের লোকজন আরও বেশী এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হবে। আপনি যদি এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত হন তবে আপনি কেবল আমার পরিচিতিই পাবেননা, আমাদের গভর্নরের পরিচিতিও লাভ করবেন। এতে করে আমাদের জনসংযোগ বৃদ্ধি পাবে। আবার আমি বাংলাদেশী কমিউনিটির বিভিন্ন পেশার যোগ্য ব্যক্তিদের স্টেটের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণও জানাতে পারি। আমি এটা করতে পারলে আমাদের কমিউনিটির আইটি থেকে শুরু করে আইনজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন পেশার উচ্চ শিক্ষিত শ্রেণী সরকারের প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট বা গভর্নরের অফিসে আর বিভিন্ন কমিশনে নিয়োগ লাভের সুযোগ পাবে। সুতরাং আপনি যদি এই প্রক্রিয়ায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেন তবে আমিও আপনাকে কোন একটি ছোট ব্যবসা, কর্পোরেশন বা বোর্ড মেম্বার এর জন্য সুপারিশ করতে পারবো। তাই আমি মনে করি আমি যদি কমিউনিটির লোকেদের সম্পৃক্ত করি তাহলে আগামী ৪/৫ বছরে আমরা আরও বাংলাদেশীকে নির্বাচিত কর্মকর্তা, বোর্ড সদস্য, কমিউনিটি কর্মী ইত্যাদির মত বিভিন্ন পর্যায়ের পদে দেখতে পাব।

ঢাকা ডিপ্লোম্যাট: বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত হিসেবে আপনি কি করতে পারেন বা বাংলাদেশের জন্য কিছু করতে পারেন কিনা?

সাদ্দাম সেলিম: হ্যাঁ, বাংলাদেশের জন্য অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। আমি এই দেশে এসেছি এবং এই দেশ আমাকে এই পদে আসার সুযোগ করে দিয়েছে। এবার আমিও বাংলাদেশের জন্য কিছু করতে চাই।  যারা আমেরিকায় শিক্ষা লাভ করে বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে চায় আমি তাদের এই দেশে শিক্ষা লাভের সুযোগ করে দিতে চাই। ভারত, কোরিয়া, চীন, সৌদী আরবের মত দেশগুলো তাদের মেধাবী শিক্ষার্থীদের এদেশে পাঠায়। এসব মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষা শেষে নিজ দেশে ফিরে গিয়ে ট্রান্সপোর্টেশন, রেলওয়ে, ফাইন্যান্সসহ বড় বড় কর্পোরেশনে অবদান রাখে। আমিও চাই বাংলাদেশের মেধাবী মানুষেরা এদেশে এসে শিক্ষালাভ করে নিজ দেশে ফিরে গিয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখুক। যদি কেউ বলে হ্যাঁ, আমার একজন ভাই বা বোন আছে যে আমেরিকায় পড়াশোনা করতে যেতে চায়। কিন্তু সে ভর্তি প্রক্রিয়াটি জানে না। আমি তাকে ভর্তি প্রক্রিয়া জানতে এবং এখানে আসতে সাহায্য করতে পারি। এটা করলে বাংলাদেশের মানুষের উন্নতি করতে পারব। তারা বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে পরিবহন ব্যবস্থা, রেলওয়ে বা  অর্থ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে পারবেন। তারা বড় কোন কর্পোরেশন বা কোম্পানিতে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করতে পারবে। এছাড়াও আমি এ দেশের বড় বড় কোম্পানীকে বাংলাদেশে নিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশে আমেরিকার বিনিয়োগ বাড়াতে চাই। আমি এটা করতে পারলে খুব ভালো হবে।

ঢাকা ডিপ্লোম্যাট: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

সাদ্দাম সেলিম:  আমি আগামী চার বছর এই পদে থাকব। এরপর প্রথমে ইউএস কংগ্রেস এবং তারপরে ইউএস সিনেটের পদের জন্য লড়বো। হ্যাঁ, প্রথমে ইউএস কংগ্রেসের জন্য। তবে সমস্যা হচ্ছে এখানকার বেশীর ভাগ জনগণ ডেমোক্র্যাট। আবার এদের মধ্যে অনেকেই হেভি ওয়েট ডেমোক্র্যাট। এসব ডেমোক্র্যাটরা অবসরে যেতে চাননা। প্রায় প্রত্যেকেই ২০-৩০ বছর একই পদ অবস্থান করেন। সেকারণে রাজনীতিতে আগ্রহী আমাদের মত তরুন-তরুনীদের জন্য পদ পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে - আগামী চার বছরে স্টেট সিনেটর হিসেবে ভার্জিনিয়া স্টেটের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এমন সব ভাল কাজ এবং নীতি প্রণয়ন করা। এতে করে চার বছর পর আমি যখন ইউএস কংগ্রেস বা ইউএস সিনেটের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইব তখন ভোটাররা আমার এই চার বছরের কাজ মূল্যায়ন করবে। দেখবে যে আমি স্টেট সিনেটর হিসেবে ভাল কাজ করেছি কিনা। মোদ্দা কথা ইউএস কংগ্রেস অথবা ইউএস সিনেট - যেটাতেই সম্ভাবনা থাকবে সেটাতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো। আবার সুযোগ থাকলে সচিব বা গভর্ণরের মত পদেও আমাকে ভাবতে হবে। এসব পদে আসাও অসম্ভব নয়।

ঢাকা ডিপ্লোম্যাট: আপনাকে ধন্যবাদ!

সাদ্দাম সেলিম: আপনাকেও ধন্যবাদ!

Comments

  • Latest
  • Popular

লস এঞ্জেলসে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

লবণ উৎপাদনে রেকর্ড

মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী স্টেইন গ্রেফতার

তাপপ্রবাহে আমে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা

টিপু-প্রীতি হত্যায় ৩৩ জনের বিচার শুরু

মেয়েদের মধ্যেও নেশার প্রবণতা বাড়ছে!

ওষুধের লাগামছাড়া মূল্য নির্ধারণ বন্ধের নির্দেশ

বসুন্ধরা গ্রুপে নিয়োগ

দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী

আম্পায়ার জেসিকে নিয়ে যা বললেন পাপন

১০
লিভার সিরোসিস অনিরাময়যোগ্য রোগ: ডা. এবি এম আব্দুল্লাহ
লিভার শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সুস্থ থাকতে লিভারের খেয়াল রাখতেই হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লিভার খারাপ
নির্বাচনে রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই: যুক্তরাষ্ট্র
নির্বাচনে রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে নির্বাচনের সময় ঘটা এই
অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ আমলেই হয় : বিবিসিকে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিবিসির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন
‘রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি করছে’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বলেছেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে সামাজিক সমস্যা তৈরি করছে কারণ তাদের অনেকেই মাদক
Error!: SQLSTATE[42S22]: Column not found: 1054 Unknown column 'parent_cat_type' in 'field list'