সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি— জীবনানন্দের এ কথাগুলো শিক্ষিত বাঙালি মহলে বহুশ্রুত, বহু উচ্চারিত, বহু উদ্ধৃত এবং সর্বজনমান্য। যারা কবি, জীবনানন্দ বলেছেন, ‘তাদের হৃদয়ে কল্পনার এবং কল্পনার ভিতরে চিন্তা ও অভিজ্ঞতার স্বতন্ত্র। সারবত্তা রয়েছে এবং তাদের পশ্চাতে অনেক বিগত শতাব্দী ধরে এবং তাদের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক জগতের নব নব কাব্য বিকিরণ তাদের সাহায্য করছে; সকলকে সাহায্য করতে পারে না; যাদের হৃদয়ে নকল্পনা ও কল্পনার ভিতরে অভিজ্ঞতা এবং চিন্তার সারবত্তা রয়েছে তারাই সাহায্যপ্রাপ্ত হয় নানারকম চরাচরের সম্পর্কে এসে তারা কবিতা সৃষ্টি করবার অবসর পায়।’
কবির স্বরূপ সম্পর্কে জীবনানন্দের এই অভিমতকেও কেউ অমান্য করতে পারবেন না বোধ হয়। তবে সবাই কবি না হয়ে কেউ কেউ কেন কবি হয়, কেন কোন কোন মানুষের ‘হৃদয়ে কল্পনার এবং কল্পনার ভিতরে চিন্তা ও অভিজ্ঞতার স্বতন্ত্র সারবত্তা’ থাকে, এবং অন্য অনেকেরই তা থাকে না কেন- সে বিষয়ে জীবনানন্দ কিছু বলেননি, বলার প্রয়োজনই হয়তো বোধ করেননি। কিংবা এমনও হতে পারে যে, সে কথা বলা একজন কবি রূপে তার অধিকারের মধ্যে পড়ে না বলেই বিবেচনা করেছেন।
জীবনানন্দ না বললেও প্রাক্ আধুনিক কালেরও এবং আধুনিক কালেরও অনেক দেশি-বিদেশি কবি ও কবিতানুরাগী কবিত্বশক্তিকে দৈবশক্তি’র সঙ্গে সংযুক্ত করে দেখেছেন। ‘অলৌকিক আনন্দের ভার’ বিধাতা যাদের ওপর চাপিয়ে দেন, তাদেরই বক্ষের ‘অপার বেদনা’ কবিতা হয়ে বেরিয়ে আসে। অর্থাৎ কবি হওয়াটা নিতান্তই দৈব অনুগ্রহলাভের ব্যাপার। আর দেবের অনুগ্রহ কখন কার ওপর কীভাবে পড়বে, নিতান্ত অলৌকিক দৃষ্টি দিয়ে মানুষ সে-রহস্যের তল পাবে কী করে? কবি ও কবিতার ব্যাপারটি তো আসলেই রহস্যময়! তবে যতই রহস্যময় বলে প্রতীত হোক, বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক মানুষ কিন্তু রহস্যকে অলৌকিকের হাতে ছেড়ে দিয়ে নির্লিপ্ত ও নিশ্চেষ্ট হয়ে থাকতে পারে না। আপাত অলৌকিককেও লৌকিকের আলো সে একটি লৌকিক ঘটনা রূপেই অবলোকন করতে চায়, সে অবলোকনের প্রদীপ সগ্রহের জন্য জীববিজ্ঞান শারীরবিজ্ঞান- মনোবিজ্ঞানের দ্বারস্থ হয়। এ ব্যাপারে বিশেষ করে মনোবিজ্ঞানের কাছেই তার প্রত্যাশা থাকে অনেক বেশি।
দুই.
কিন্তু মনোবিজ্ঞানও সব সময় প্রত্যাশা পূরণে সহায়ক হয় না, অনেক সময় বরং বিভ্রান্তই করে।কোনো কোনো ঘরানার মনোবিজ্ঞান তো বৈজ্ঞানিকতার বদলে এক ধরনের রহস্যময়তাকেই আমন্ত্রণ করে আনেন। কবির কবিতা-সৃষ্টিকে এঁরা সজ্ঞান ক্রিয়া বলেই মনে করেন না। এঁদের মতে কবিতা বা যে কোনো শিল্পই কবি-শিল্পীর নির্জ্ঞান মনের সৃষ্টি, কবি-শিল্পীরা তাদের পূর্ব পরিকল্পনা মতো কিছুই সৃষ্টি করতে পাবেন না। নির্জ্ঞানবাদীদের মধ্যেও অবশ্যি নানা ধরনের ঘরানা বা উপ-ঘরানা আছে।যেমন ফ্রয়েডপন্থীরা ব্যক্তি নির্জ্ঞানে বিশ্বাসী, আর ফ্রয়েডের বিদ্রোহী শিষ্য ইয়ুঙ্গ ও তাঁর অনুসারীদের বিশ্বাস সমষ্টি-নির্জ্ঞান। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যক্তি বা সমষ্টি কোনোরূপ নির্জ্ঞানের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেই কি বিশেষ বিশেষ মানুষের কবি বা শিল্পী হওয়ার হেতু নির্দেশ করা যায়? নির্জ্ঞানপন্থী মনোবিজ্ঞানীদের কথা বিশ্বাস করলে তো মানতেই হয় যে কবি বা শিল্পীর নির্জ্ঞান মনই তাঁকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরায়। নির্জ্ঞান মনের হাতে তিনি পুতুল মাত্র। সে তাকে যেমনি নাচায়, তিনি তেমনি নাচেন। দেখে শুনে তো মনে হয় যে, নির্জ্ঞানপন্থী মনোবিজ্ঞানী আর দৈব বিশ্বাসী অধ্যাত্মবাদীর নির্জ্ঞান একই রকম সর্বশক্তিমান, রহস্যময় ও স্বেচ্ছাচারী। তাই, ‘কেউ কেউ কেন কবি’- নির্জ্ঞানবাদী মনোবিজ্ঞানীর কাছে সে প্রশ্নের সন্তোষজনক উওর মেলে না।
আবার অন্যদিকে আছে মনহীন মনোবিজ্ঞান। এ রকম মনোবিজ্ঞানের অনুসারীরা মনটা বলে কোনো কিছু মানতে চান না। বিহেভিয়ারিস্ট বা আচরণবাদী নামে পরিচিত ওই মনোবিজ্ঞানীরা মানুষসহ সব প্রাণীরই মানস ক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করতে চান উদ্দীপন ও সাড়া ( STIMULAS AND RESPONSE )-র তত্ত্ব দিয়ে। এ তত্ত্ব বলে- ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে বাইরে থেকে নানা বিষয় প্রাণীর স্নায়ুকে উদ্দীপ্ত করে, সেই উদ্দীপনের ফলে প্রাণী সে সাড়া দেয় তাই তার আচরণ। মানসক্রিয়া নামে যা পরিচিত তা এই আচরণ ছাড়া আর কিছুই নয়।
এ তত্ত্বের সাহায্যে মানবেতর প্রাণীর আচরণের ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব হলেও ‘মানুষ’ নামক সৃষ্টির সেরা প্রাণীটির মানস ক্রিয়ার ব্যাখ্যাতেও এ তত্ত্ব প্রযোজ্য কিনা, এ রকম প্রশ্ন সংগতভাবেই উঠতে পারে। উঠেছেও। মানুষের স্কুল-সূক্ষ্ম উন্নত-অনুন্নত গভীর অগভীর নানা ভাবনা-চিন্তা, আবেগ-উদ্দীপনা যান্ত্রিক আচরণ ছাড়া আর কিছুই নয়─ এমন ধারণা কোনো মতেই জীবজগতে মানুষের অনন্যতাকে প্রতিষ্ঠিত করে না। বাইরের একই রকমের উদ্দীপনায় সকল মানুষের সাড়ার প্রকৃতি অভিন্ন নয়। কোনো মানুষের প্রকৃতিতে যুক্তির প্রাধান্য, কোনো মানুষে আবেগের। গড়পরতা সাধারণ মানুষের বাইরে আছেন অসাধারণ প্রতিভাশালী মানুষেরা। প্রতিভারও আছে নানান রকমফের। কেউ ভাবয়িত্রী প্রতিভার অধিকারী, কেউ কারায়িত্রী প্রতিভার। কেউ বিজ্ঞানী-দার্শনিক, কেউ শিল্পী-কবি। কেন এ রকম হয়? এ প্রশ্নের বা আরও স্পষ্ট করে বললে, ‘সকলেই কবি না হয়ে কেউ কেউ কবি হন কেন’ তার উত্তর –নির্জ্ঞানবাদী মনোবিজ্ঞানের মতো আচরণবাদী মনোবিজ্ঞানের কাছেও পাওয়া যায় না।
তিন একেবারে নিঃসংশয় উত্তর যে মনোবিজ্ঞানের অন্য কোনো ঘরানার কাছ থেকে পাওয়া যাবে- তেমন মনে করারও কারণ নেই। তবে, পাভলভপন্থী মনোবিজ্ঞানীরা যে কবি-শিল্পীদের মানস বৈশিষ্ট্যকে অনেক পরিমাণে চিহ্নিত করতে পেরেছেন, সে কথা মানতেই হবে। পাভলভ ও তাঁর শিষ্য-প্রশিষ্যরা ফ্রয়েডীয় ঘরানার মনোবিজ্ঞানীদের নির্জানপন্থাকে যেমন প্রত্যাখ্যান করেছেন, তেমনি বিহেভিয়ারিস্ট বা আচরণবাদের যান্ত্রিকতাকেও প্রশ্রয় দেননি। -নির্জ্ঞানপন্থীদের ভাববাদ ও
বিহেভিয়ারিস্টদের যান্ত্রিক বস্তুবাদ-উভয়টিকে বর্জন করেই পাভলভীয় মনোবিজ্ঞান হয়েছে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী। সেই দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী মনোবিজ্ঞান মানুষের বিভিন্ন ব্যক্তি বৈশিষ্ট্যের স্বরূপ অনুধাবনে অনেক পরিমাণেই সক্ষম হয়েছে। তাই মনে হয়, সকলেই কবি নয় অথচ কেউ কেউ কেন কবি- এ প্রশ্নের উত্তর যাচ্ঞা করে পাভলভীয় মনোবিজ্ঞানের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালে একেবারে বিমুখ হয়ে ফিরে আসতে হবে না। কিন্তু, মুশকিল হচ্ছে, পাভলভীয় মনোবিজ্ঞানের সুষ্ঠু চর্চা আমাদের দেশে প্রায় হয়ইনি বলা চলে। সাধারণ্যে এ বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা নিতান্তই অপ্রতুল। কবি- সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী মহলে ফ্রয়েড, ইয়ুং বা নয়াফ্রয়েডীয় এরিক ফ্রমের কথাবার্তা নিয়ে যে হারে মাতামাতি চলে, পাভলভ নিয়ে তার এক শতাংশও নয়। অনেকেই, এমনকি মনোবিজ্ঞানী ও মনোচিকিৎসকরাও পাভলভকে বিহেভিয়ারিস্টদের দলভুক্ত বলেই বিবেচনা করেন। এ রকম বিবেচনা যে একান্ত ভ্রান্ত, সংশ্লিষ্ট মহলে এখনো সে বোধের সঞ্চার ঘটেনি।
বিহেভিয়ারিজমের সঙ্গে পাভলভীয় মনােবিজ্ঞানের মূল পার্থক্যটি নিহিত মানুষ ও মানুষের প্রাণীর সাংকেতিক তন্ত্র ( SIGNALLING SYSTEM ) সম্পৰ্কীয় ধারণার মধ্যে। প্রথাগত মনোবিদ্যার কোনো ঘরানাই কিন্তু সাংকেতিক তন্ত্র নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করে না। অথচ পাভলভীয় মনোবিদ্যার বিশাল সৌধটি এই সাংকেতিকতন্ত্রের ভিত্তির ওপরই দাঁড়িয়ে আছে। এ মনোবিদ্যার পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে যে, সাংকেতিক তন্ত্রের পার্থক্যই যেমন মানুষের প্রাণী থেকে মানুষকে পৃথক করেছে, তেমনি মানুষে মানুষে শক্তি ও প্রবণতার পার্থক্যের অন্যতম প্রধান কারণও ওই সাংকেতিক তন্ত্রই। মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীর ভেতর একটি মাত্র সাংকেতিক তদ্র কাজ করে, আর মানুষের ভেতর আছে দ্বিতীয় আরেকটি সাংকেতিক তন্ত্র। স্নায়ুমণ্ডলীর যে তন্ত্রের মাধ্যমে মস্তিকে বহির্বাস্তবের প্রত্যক্ষ প্রতিফলন ঘটে পাভলভপন্থীরা তাকেই বলেন প্রথম সাংকেতিক তন্ত্র; আর মস্তিষ্কের কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত তন্ত্রটিই দ্বিতীয় সাংকেতিক তন্ত্র। এই প্রথম ও দ্বিতীয় সাংকেতিক তন্ত্রের যেটি যে-মানুষের ওপর প্রবলতর থাকে, মূলত তা দিয়েই নির্ধারিত হয় সেই মানুষের ব্যক্তিত্বের বিশেষ প্রবণতা। কোনো মানুষের প্রবণতায় যে আবেগের প্রাধান্য থাকে, আর কোনো মানুষের যুক্তির, তা – ও ওই দুটো সাংকেতিক তন্ত্রের কোনো একটির প্রবলতারই ফল। আবেগপ্রবণ মানুষের প্রথম সাংকেতিক তন্ত্র শক্তিশালী আর যুক্তিপ্রবণ মানুষের দ্বিতীয় সাংকেতিক তন্ত্র।
কবি-শিল্পী হন সেই মানুষেরাই যাদের ভেতর প্রথম সাংকেতিক তন্ত্রের প্রাধান্য। বিজ্ঞানী-দার্শনিক হন তারাই, যার শক্তিশালী দ্বিতীয় সাংকেতিক তন্ত্রের অধিকারী। পাভলভীয় মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায় প্রতিভাবানদের দু’টি ‘টাইপ’- কবি-শিল্পীরা ‘আর্টিস্ট টাইপ ও বিজ্ঞানী দার্শনিকরা‘ ফিলোসফার টাইপের অন্তর্ভুক্ত। প্রতিভাবান কবি-শিল্পী বা বিজ্ঞানী-দার্শনিকদের তো আর কোনো সমাজেই অজস্র সংখ্যায় পাওয়া যায় না, সমাজ গড়ে ওঠে মূলত সাধারণ মাপের মানুষদের নিয়েই। আর্টিস্ট টাইপ আর ফিলোসফার টাইপের মধ্যবর্তী অবস্থানে বিচরণশীল মানুষদের অর্থাৎ আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের মধ্যে থাকে প্রথম ও দ্বিতীয় সাংকেতিক তন্ত্রের ভারসাম্য। এই আমরাই সমাজের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ। আমাদের আবেগও আছে, যুক্তিও আছে; হয়তোবা কারো আবেগের মাত্রা একটু বেশি, কারো যুক্তিবোধ কিছুটা প্রবল। এই নিয়েই আমাদের ব্যক্তিত্ব বা ব্যক্তিবৈশিষ্ট্য চিহ্নিত হয়, ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে পার্থক্যও দেখা দেয়। তবে সে পার্থক্য আমাদের কাউকেই এমন অনন্যতা দেয় না যাতে আমরা একেকজন অন্য দশজন থেকে একেবারে আলাদা রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়ে অন্যের দৃষ্টি কেড়ে নিতে পারি। আমরা প্রত্যেকে দশজনের একজন হয়েই সমাজে বাস করি, দশের বাইরে এগারো হতে পারি না।
প্রতিভাবান কবি-শিল্পী বা বিজ্ঞানী-দার্শনিক কিন্তু আমাদের মতো দশের এক নন, দশের বাইরে এগারো। প্রতিভাবান এই বলেই আমরা সাধারণেরা, কবি-শিল্পী ও বিজ্ঞানী-দার্শনিকদের দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টি নিয়ে তাকাই। তাকিয়ে অভিভূত হয়ে পড়ি। বিশেষ করে কবি-শিল্পীদের সম্পর্কে। যুক্তি-প্রমাণ নিয়েই বিজ্ঞান- দার্শনিকদের কারবার বলে আমরাও তাদের বিচারে যুক্তিশীল থাকি। তাদেরকে শ্রদ্ধা ও সমীহ করি বটে, কিন্তু তাঁদের নিয়ে প্রচণ্ড আবেগ কিংবা প্যাসনে অভিভূত হয়ে পড়ি না। অথচ, কবি-শিল্পীদের বেলায় ব্যাপারটি অন্যরকম হয়ে দাঁড়ায়। শিল্প-কবিতার আধারে প্রকাশিত তাদের আবেগ আমাদের আবেগকেও প্রচণ্ডভাবে নাড়া দিয়ে যায়, আমরাও তাদের অনেক সময় যুক্তি দিয়ে বুঝে উঠতে পারি না। কিংবা বুঝতে চাই না। আর তা পারি না ও চাই বলেই কবি-শিল্পীদের ক্ষমতা বা প্রতিভার উৎস নির্দেশে অলৌকিক রহস্যের শরণ নিই। কবি-শিল্পীরা নিজেরাও তাই করেন। মধ্যযুগের বাঙালি কবি কৃত্তিবাসের আত্মকথনের ‘সরস্বতী অধিষ্ঠান আমার শরীরে নানা ভাষা নানা কথা আপনা হইতে ফুরে’ থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথের ‘অন্তর্যামি’ বা ‘জীবনদেবতা’ পর্যন্ত একই মানসিকতার প্রকাশ।
রহস্যময়তার কুয়াশাজাল থেকে মুক্ত করে পাভলভীয় মনোবিজ্ঞানের আলোকে কবি শিল্পীদের স্বরূপ-প্রকৃতি অবলোকন করতে চাইলে সেই বিজ্ঞানের মূল কথাগুলোর অনুধাবনা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। প্রথম ও দ্বিতীয় সাংকেতিক তন্ত্র ( FIRST AND SECOND SIGNALLING SYSTEM ) ও ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন টাইপের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পাভলভীয় মনোবিজ্ঞানের প্রত্যয়ের কিছু গভীরে আমাদের প্রবেশ করতেই হবে। আর সেই সঙ্গে অনপেক্ষ ও সাপেক্ষ পরাবর্ত ( UNCONDITIONED AND CONDITIONED REFLEXES ) সম্পর্কেও। পরাবর্ত সম্পৰ্কীয় ধারণা-পাভলভীয়।মনোবিজ্ঞানের মতোই- বিহেভিয়ারিজম বা আচরণবাদী মনোবিজ্ঞানেরও মূল উপজীব্য। কিন্তু তার সঙ্গে পাভলভীয় ধারণার মৌলিক পার্থক্য আছে। সে পার্থক্যের বিষয়টি অবশ্যই স্পষ্ট করে বুঝে নিতে হবে। তা না হলে পাভলভীয় মনোবিজ্ঞানে আর যান্ত্রিক আচরণবাদকে আমরাও ভিন্ন ভেবে বসবো। কেন ‘সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি-এ প্রশ্নের বিজ্ঞানসম্মত উত্তর কিছুতেই খুঁজে পাবো না।
Comments