রোববার, ০৫ জানুয়ারি, ২০২৫
Sunday, 05 January, 2025

অবশেষে কাজী নজরুল ইসলামকে ‌‘জাতীয় কবি’র রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাডিপ্লোমেটডটকম
  03 Jan 2025, 02:04
জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন কাজী নজরুল ইসলাম

অবশেষে বাংলাদেশের জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৭২ সালের ৪ মে বাংলাদেশে আসার তারিখ থেকে তাঁকে বাংলাদেশের ‘জাতীয় কবি’ ঘোষণা করে গতকাল  বৃহস্পতিবার  গেজেট প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে। 
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আতাউর রহমান স্বাক্ষরিত এক গেজেট প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গত ডিসেম্বরে উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় অনুমোদিত প্রস্তাব অনুযায়ী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি ঘোষণা করা হয়েছে এবং এটি সকলের অবগতির জন্য গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি ঘোষণা করে গেজেট প্রজ্ঞাপন প্রকাশের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
কবি কাজী নজরুল ইসলামের জাতীয় কবির মর্যাদার বিষয়টি ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত সত্য এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও স্বীকৃত। বাংলাদেশের জনগণ তাঁকে তাঁর ঢাকায় আগমনের তারিখ থেকে জাতীয় কবি ঘোষণা করে সরকারি প্রজ্ঞাপন প্রত্যাশা করে আসছিল। উপদেষ্টা পরিষদ এ প্রত্যাশা অনুযায়ী এ প্রস্তাব অনুমোদন করে। 
এ বিষয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক লতিফুল ইসলাম শিবলী বলেন, এই চাওয়া দীর্ঘ দিনের। অনেক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও নজরুল ভক্তরা এই দাবিতে রাজপথ থেকে শুরু করে আদালত পর্যন্ত দৌড়েছেন। অনেক লেখালেখি হয়েছে, জাতীয় সংসদেও আলোচনা হয়েছে। মন্ত্রীর টেবিল পর্যন্ত পৌঁছানোর পর ফ্যাসিস্ট  আওয়ামী রেজিমের এক জনপ্রিয় সংস্কৃতিমন্ত্রী এই দাবি নাকচ করে দিয়েছিলেন। সেসব এখন ইতিহাস।
লতিফুল ইসলাম শিবলী বাসসকে বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের ফসল বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্তটি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এ দেশের সাধারণ মানুষের আন্তরিক প্রত্যাশা সত্ত্বেও অতীতে রাজনৈতিক বা অন্য কোনো সরকার এ সিদ্ধান্তটি নেয়নি। বর্তমান সরকারের আন্তরিকতার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। সে জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।
তিনি বলেন, যাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা ছাড়া এই কাজ সম্ভব হত না তাদেরকে আমি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি আর ধন্যবাদ জানাচ্ছি, তারা হলেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ভাই, উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকি। আরও আছেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আতাউর রহমান ভাই এবং তার টিমের কর্মকর্তাদেরকে।
লতিফুল ইসলাম শিবলী বলেন, ‘কবি নজরুল ইন্সটিউটের দায়িত্ব পাওয়ার পর ৪ মাসের মধ্যে একটা দীর্ঘ দিনের দাবি বাস্তবায়িত করতে পেরে মহান আল্লাহর শুকরীয়া আদায় করছি- আলহামদুলিল্লাহ। আমি দায়িত্ব পাওয়ার পরই প্রথম জানতে পারলাম যে জাতীয় কবি হিসেবে নজরুলের প্রত্যক্ষ অফিসিয়াল কোন স্বীকৃতি নেই। যেটা আছে সেটা পরোক্ষভাবে নজরুল ইনস্টিটিউট এর অর্ডিন্যান্স হিসেবে, এবং মুখে মুখে প্রচলিত স্বীকৃতি।’
তিনি বলেন, ‘আমি প্রথম দিন নজরুলের কবর জেয়ারত করে পণ করেছিলাম যে এই কাজটা আমি করব। আলহামদুলিল্লাহ সেটা করতে পেরেছি। আর নতুন বাংলাদেশ এখন দাঁড়িয়ে আছে নজরুলের দ্রোহ প্রেম ও সাম্য চেতনার ওপর। ইনশাল্লাহ এই চেতনাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য আমরা কাজ করে যাব।’
খুব তাড়াতাড়ি এই খুশি উদযাপন করবেন বলেও জানান কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক।
কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ১৯৭২ সালের ২৪ মে কলকাতা থেকে সরকারি উদ্যোগে সপরিবারে ঢাকায় আনা হয় এবং তাঁর বসবাসের জন্য ধানমন্ডির ২৮ নম্বর (পুরাতন) সড়কের ৩৩০-বি বাড়িটি বরাদ্দ প্রদান করা হয়।
এরপর ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তাকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বেসামরিক সম্মানসূচক পদক একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। 
১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি তারিখে বঙ্গভবনে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদউল্লাহ নজরুলকে ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করেন। 
কবি নজরুল ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ইন্তেকাল করেন। নজরুল তার একটি গানে লিখেছেন, ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই, যেন গোরে থেকেও মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই’। এই ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
তার নামাজে জানাজায় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ শরিক হন। জানাজার পর রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, রিয়াল এডমিরাল এম এইচ খান, এয়ার ভাইস মার্শাল এ জি মাহমুদ, মেজর জেনারেল দস্তগীর জাতীয় পতাকা-মোড়ানো নজরুলের মরদেহ বহন করে সোহরাওয়ার্দী ময়দান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে নিয়ে যান। বাংলাদেশে তার মৃত্যু উপলক্ষে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালিত হয়। 
পরবর্তীকালে তাঁকে জাতীয় কবি হিসেবে সম্বোধন করে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮ জারি করা হয়।
১৯২৯ সালের ১০ ডিসেম্বর অবিভক্ত ভারতের কলকাতার এলবার্ট হলে সমগ্র বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে নেতাজী সুবাস চন্দ্র বসু, বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, এস, ওয়াজেদ আলী, দীনেশ চন্দ্র দাশসহ বহু বরণ্যে ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিতে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ‘জাতীয় কাণ্ডারী’ এবং ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। 
কিন্তু সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃত হলেও কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করে ইতিপূর্বে সরকারিভাবে কোনো গেজেট প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি।

Comments

  • Latest
  • Popular

ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে রুনা খান

কুয়াশার চাদরে ঢাকা দেশ, জনজীবন বিপর্যস্ত

শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে যা বলছে ভারত

রাজধানী ও সিলেটের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভূমিকম্প অনুভূত

রোববারের মধ্যে বাংলাদেশ-ভারতে আটক জেলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শেষ হবে

অবশেষে কাজী নজরুল ইসলামকে ‌‘জাতীয় কবি’র রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন সেনাপ্রধান

বাণিজ্য মেলার প্রস্তুতি সারা বছর ধরেই চলবে: প্রধান উপদেষ্টা

শেখ হাসিনা ইস্যুতে আটকে থাকবে না বাংলাদেশ ভারত সর্ম্পক : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

পবিত্র শবে মেরাজ ২৭ জানুয়ারি

১০
জীবনানন্দ পুরস্কার ২০২৪ পেলেন যারা
ধানসিড়ি সাহিত্য সৈকত, রাজাপুর ঝালকাঠি ও আড্ডা ধানসিড়ি বরিশালের উদ্যোগে জীবনানন্দ পুরস্কার ২০২৪ প্রদান প্রদান
প্রেম ও দ্রোহের সুরকার এবং হেলাল হাফিজ
এখন যৌবন যার মিছিলে যাওয়ার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাওয়ার তার শ্রেষ্ঠ
জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে শিল্পকলায় ভাস্কর্য কর্মশালা
রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ বিভাগের তত্ত্বাবধানে জুলাই অভ্যুত্থানকে উপজীব্য করে গত ২০ নভেম্বর ভাস্কর্য কর্মশালা
সৈয়দ শামসুল হকের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সব্যসাচী লেখক ও কবি সৈয়দ শামসুল হকের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর)।
Error!: SQLSTATE[42S22]: Column not found: 1054 Unknown column 'parent_cat_type' in 'field list'