ডলারের বিপরীতে দর পড়ে গেছে টাকার। গত ছয় মাসে ডলারের দর বেড়েছে ৮ থেকে ৯ টাকা। এর প্রভাব পড়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। শেয়ারবাজারে কমে যাচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মুনাফা। ফলে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিও থেকে শেয়ার বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ব্যাপকভাবে। ফলে চাপের মুখে পড়েছে শেয়ারবাজার, বার বার উঠানামা করছে সূচকগুলো। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ(ডিএসই) ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষন করে এমনটাই জানাগেছে।তবে বাজারের স্থিতিশীলতার কথা বলে এ নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজী হননিবিশেষজ্ঞরা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী ডলারের মূল্যবৃদ্ধি পায়। এর মধ্যে টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়ে যাওয়ায় লোকসানে পড়তে হয়েছে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের। লোকসান এড়াতে তাই তারা এ বছরের শুরু থেকে শেয়ার বিক্রি শুরু করেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে শেয়ারবাজার থেকে বৈদেশিক বিনিয়োগ ফেরত গিয়েছে ১ হাজার কোটি টাকা, আর বিদেশী বিনিয়োগ ঢুকেছে মাত্র ৩০০ কোটি টাকা। গত বছর বৈদেশিক বিনিয়োগের ঢুকেছিলো ছিল ৫ হাজার কোটি টাকা, যেখানে বের হয়ে গিয়েছিলো ছিল ২ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী,২০২১অর্থবছর শেষে শেয়ারেবাজারে নেট পোর্টফোলিও বিনিয়োগ নেতিবাচক ছিলো। এ সময়ে বিদেশী বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ কমেছে ২৬৯ মিলিয়ন বা ২৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার। যা টাকার অংকে দাড়ায় ২ হাজার ৪৯৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এক বছর আগে ২০২০ অর্থবছরে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিলো ৪৪ মিলিয়ন ডলার বা ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। যা টাকার অংকে দাড়ায় ৪১১ কোটি ২৩ লাখ ৯৭ হাজার ৫২০ টাকা। ডলারের দর ৯৩ দশমিক ৫০ ধরে এই হিসাব করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপের কারণে কয়েক বছর ধরে বিনিময় হার৮৪-৮৫টাকার মধ্যে স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চলতি বছরের জুন মাসে বিনিময় হার ৯০ টাকা অতিক্রম করে। গত দেড় বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন হয়েছে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন শেয়ারবাজারে( বিএসইসি) বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন দেশে একাধিক রোড শো করলেও এর প্রভাব বিদেশি বিনিয়োগ পোর্টফোলিওতে প্রতিফলিত হয়নি।
এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসইএক্স) তথ্যঅনুসারে, গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত আট মাসের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রড ইনডেক্স ১৬ শতাংশ কমেছে। গত বছরের অক্টোবরে ডিএসইএক্স৭৩০০ছুঁয়েছিল, যা গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। কিন্তু বাজারে গুরুতর ডলার সংকটের মধ্যে টাকার দ্রুত অবমূল্যায়ন ঘটে। এ কারণে এই ধারা স্থায়ী হয়নি। এতে পুঁজিবাজারে মার্কেটে চাপ সৃষ্টি হয় এবং মূল্য সূচক৬ হাজার এর ঘরে নেমে যায়।
এ সময়ে দৈনিক লেনদেন ১,৮০০ কোটি টাকা থেকে গড়ে ৬০০ কোটি টাকায় নেমে আসে।
অতি সম্প্রতি অবস্থার কিছুটা উন্নতি হচ্ছিলো। প্রাণ ফিরে পাচ্ছিলো দেশের পুঁজিবাজার। কিন্তু সপ্তাহ খানেক ধরে আবার সূচক ও লেনদেন কমে যেতে শুরু করে। ঈদের আগে সর্বশেষ কর্মদিবসেডিএসইর প্রধান সূচকডিএসইএক্স দশমিক ৯০ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়।
সপ্তাহের প্রথম দিন ডিএসই প্রধান সূচক ১৭ পয়েন্ট কমে ৬৩৫৯ পয়েন্টে নেমে আসে। সোমবার আরো ১২ পয়েন্ট হারায় সূচক। সপ্তাহের তৃতীয় দিন আবার সূচক ও লেনদেন বেড়ে যায়। ২৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬৩৭২ পয়েন্টে পৌছায়।লেনদেনও হয় ৯৬০ কোটি ৭৯ লাখ টাকার।সপ্তাহের শেষ দুইদিন বাজার নিম্নমুখী থাকে। বুধবার ৬ পয়েন্ট কমেছিলো। বৃহস্পতিবার দশমিক ৯০ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে সূচক ৬৩৬৬.৯৫ পয়েন্টে অবস্থান করে।
এদিকে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসই শরীয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৩৮৭পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২২৯৩ পয়েন্টে।
আজ ডিএসইতে ৩৭৮টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৬৬টির, কমেছে ১৪৯টির এবং আগের দিনের দাম ধরে রেখেছে ৬৩টি কোম্পানি।
Comments