কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার হিসেবে জুনের প্রথম সপ্তাহে যোগ দেওয়ার কথা ছিল শাবাব বিন আহমেদের। অথচ মিশনে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনে ঐতিহ্যগতভাবে চলে আসা কোরবানি দেওয়ার প্রথা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ নিয়ে দেশে–বিদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শাবাব বিন আহমেদের কলকাতায় ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ বাতিল করেছে।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক দাপ্তরিক আদেশে শাবাব বিন আহমেদকে বাংলাদেশ দূতাবাস, দ্য হেগ মিশনের বর্তমান দায়িত্বভার ছেড়ে অনতিবিলম্বে ঢাকায় ফেরার অনুরোধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে গত বছরের ২১ নভেম্বর কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে উপহাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগের আদেশ বাতিল করা হয়েছে।
কোরবানি বন্ধের নির্দেশনা দেওয়ার পর গণমাধ্যমের নিজের অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দিয়ে শাবাব বিন আহমেদ বলেছিলেন, ‘আমরা কূটনীতিকেরা দেশের জন্য কাজ করি। আমরা যেখানে কাজ করব, সেখানকার পরিবেশ পরিস্থিতির কথা আমাদের মাথায় রাখা দরকার।’ তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের স্বাগতিক দেশের রীতিনীতি মেনে চলা উচিত। কূটনীতিক হিসেবে হোস্ট কান্ট্রির আস্থা অর্জন করা জরুরি।’
প্রসঙ্গত, কলকাতায় বাংলাদেশ মিশনে কোরবানির রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ওই মিশনে কোরবানি হয়ে আসছে। প্রতিবছরই কয়েকটি গরু ও ছাগল কোরবানি করা হয়। এই কোরবানির গোশতের একটি বড় অংশ বিভিন্ন এতিমখানায় পাঠানো হয়। এ ছাড়া মিশনের চারপাশে বসবাসকারী মুসলিমদের মধ্যেও কোরবানির গোশত বিতরণ করা হয়।
শাবাব বিন আহমেদের জুনে ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে কলকাতায় দায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার আগেই তিনি মিশনে কোরবানি বন্ধের ব্যাপারে তৎপর হন। এ জন্য তিনি কলকাতা মিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কোরবানি বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন। কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের কর্মকর্তারা তাঁর কাছে মিশনের কোরবানির বিষয়টির সঙ্গে স্পর্শকাতরতার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। কিন্তু তা অগ্রাহ্য করেন তিনি।
কলকাতা মিশন সূত্রে জানা গেছে, নবনিযুক্ত মিশনপ্রধানকে প্রয়োজনে কোরবানির শেষে দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু শাবাব বিন আহমেদ সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে মিশনের কর্মকর্তাদের সাফ জানিয়ে দেন, তিনি আগামী ২ জুন দায়িত্ব নেবেন এবং কোরবানির সব ধরনের প্রস্তুতি বন্ধ করতে বলেন। তাঁর ওই সিদ্ধান্তে মিশনের ভেতরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। তাঁর এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে কেউই একমত নন। এ ছাড়া বিষয়টি এখন মিশনের বাইরেও জানাজানি হয়েছে।
Comments