বুধবার ঢাকায় ২০তম ডি-৮ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ২০তম ডি-৮ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সভার উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন।
এছাড়া উদ্বোধন অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, এমপি, ডি-৮ মহাসচিব এ্যাম্বাসেডর ইসিয়াকা আব্দুলকাদির ইমাম (Ambassador Isiaka Abdul Qadir Imam), পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম, এমপি, পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন এবং ডি-৮ সিসিআই প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম বক্তব্য প্রদান করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ২০তম ডি-৮ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সভা শুরু হয়। হাইব্রিড ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় তুরস্ক ও ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রীসহ অন্যান্য ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন এবং বক্তব্য প্রদান করেন।
মন্ত্রী পর্যায়ের সভা শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশ ডি-৮ এর সভাপতি হিসেবে আজ হাইব্রিড ফরম্যাটে ২০তম ডি-৮ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সভার আয়োজন করেছে। তিনি বলেন, দশম শীর্ষ সম্মেলনে ডি-৮ নেতৃবৃন্দের গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের অগ্রগতি ২০তম ডি-৮ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সভায় পর্যালোচনা করা হয়। সভায় ডি-৮ মহাসচিব, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিষয়ে বিগত বছরে গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন।
ড. মোমেন বলেন, এবারের ডি-৮ মন্ত্রী পর্যায়ের সভায় ডি-৮ সদস্য দেশসমূহের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশেষত বাণিজ্য, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্প সহযোগিতা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, পরিবহন, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ এবং পর্যটন— গুরুত্বপূর্ণ এ ছয়টি খাতে ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী চলমান জ্বালানি সংকটের প্রেক্ষাপটে জ্বালানি খাতে ডি-৮ দেশসমূহের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে ডি-৮ পররাষ্ট্রমন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রীগণ ১ম জ্বালানি বিষয়ক ডি-৮ মন্ত্রী পর্যায়ের সভা (1st D-8 Ministerial Meeting on Energy) আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ডি-৮ একটি অর্থনৈতিক জোট। প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে ডি-৮ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বাণিজ্য প্রসারের লক্ষ্যে ডি-৮ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠাকালীন ডি-৮ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৪ বিলিয়ন ডলার যা বর্তমানে ১২৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ইতোমধ্যে মিশর ব্যতীত অন্যান্য সাতটি সদস্য দেশ ডি-৮ অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (D-8 PTA) অনুসমর্থন করেছে। মিশর শীঘ্রই ডি-৮ অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তিতে অনুসমর্থন প্রদানের বিষয়ে এবারের সভায় জানিয়েছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন।
এছাড়া ডি-৮ অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত কার্যকর করার লক্ষ্যে ড্রাফ্ট ট্রেড ফেসিলিটেশন স্ট্রাটেজি (Draft Trade Facilitation Strategy) – এর চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়া চলছে। এবারের সভায় এ বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয় এবং শীঘ্রই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য ৩য় বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের সভায় (3rd Trade Ministers Meeting) এই ড্রাফ্ট ট্রেড ফেসিলিটেশন স্ট্রাটেজি গৃহীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বছর আমরা ডি-৮ প্রতিষ্ঠার পঁচিশ বছর পূর্তি উদযাপন করছি। এই শুভলগ্নে, ডি-৮ এর সদস্যপদ লাভের জন্য আজারবাইজান আবেদন করেছে। এবারের সভায় আজারবাইজানের ডি-৮ সদস্যপদের আবেদনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় ডি-৮ এ নতুন সদস্যরাষ্ট্র অন্তর্ভূক্তির নীতিমালা প্রণয়ণের জন্য সদস্য রাষ্ট্রসমূহের নিকট মতামত প্রেরণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়াও, নাইজেরিয়ার প্রস্তাবিত ডি-৮ ইয়ুথ কাউন্সিল (D-8 Youth Council) গঠনের বিষয়েও সভায় আলোচনা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন এবং ইতোপূর্বে বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালে ঢাকায় দ্বিতীয় ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনটি সফলভাবে আয়োজন করেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ০৮ এপ্রিল ২০২১ তারিখে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট- এর নিকট হতে ডি-৮ এর সভাপতিত্ব গ্রহণ করেন।
Comments