আজ রবিবার ৭ এপ্রিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ২০২৪। আন্তজার্তিকভাবে এবং জাতীয় পর্যায়ে দেকশে দেশে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপিত হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়, এর কারণ হচ্ছে জাতিসংঘের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ এর জন্মদিন ৭ এপ্রিল ১৯৪৮। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠার ২ মাস পর ২৪ জুন ১৯৪৮ সালে এই সংস্থার প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল জেনেভায়। সেই সময় সারা বিশ্বের ৪৬টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। সেই সম্মেলন থেকেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরিতে ১৯৫০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে প্রতি বছর নিয়মিত বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতি বছর এমন একটি প্রতিপাদ্য বিশ্ববাসীর সামনে নিয়ে আসে যা বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৫০ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো ‘নো ইউর হেলথ সার্ভিসেস’ যার অর্থ ‘নিজের স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কে সচেতন হোন’। এভাবে ৭৩ বছর ধরে ৭ এপ্রিল বিশ্ব জুড়ে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস’। প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণের জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় উক্ত সংস্থার সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের নিয়ে।
এই বছরের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হল ‘আমার স্বাস্থ্য, আমার অধিকার’ (মাই হেলথ, মাই রাইট)।
২০২৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন করছে। শুরুতে প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ছিল সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। ৭৬ বছর পরে এখন ফিরে দেখার বিষয় এর কতটা পূরণ করতে পেরেছে। জনস্বাস্থ্যের কতটা উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে। গত ৭ দশকে মানুষের জীবনযাত্রার মান কতটা উন্নতি হয়েছে সেটাও দেখার বিষয়। এর সাথে সাথে বর্তমান ও আগামী দিনের জন্য মানুষের স্বাস্থ্যের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় কার্যকরী পদক্ষেপসমূহ গ্রহণের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে।
আমরা জানি যে কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বস্বাস্থ্য খাতের নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে বর্তমান সরকার।আর আমাদের সারা বছর যেমন কিছু অসংক্রামক ব্যাধি থাকে সঙ্গে নানান ধরনের সংক্রামক ব্যাধি যা বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব একটি হুমকির সম্মুখীন করছে – যেমন কোভিড-১৯ সহ কয়েক বছর আগে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ইবোলা,এনথ্রাক্স, চিকনগুনিয়া।
আমরা জানি, ২০২০ সালের ৮ই মার্চ প্রথম বাংলাদেশে করোনা শনাক্ত হয় এবং ১১ই মার্চ ২০২০ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা দেয়। ১৮ ই মার্চ ২০২০ প্রথম বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আজ ২০২৪ইং ৭ই এপ্রিল ১৪৯০ তম দিনে এসে পৌঁছেছি।
আমরা জানি সারা বিশ্ব স্বাস্থ্যখাতের উন্নতির জন্য নানাভাবে সংগ্রাম করছে। আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেলেও দেশের অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্যখাতের সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অর্থাৎ ধনী গরীবের বৈষম্য ও সরকারি এবং বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা বৈষম্য রয়েছে। এই বৈষম্য আমাদের দূর করা দরকার।
আমাদের স্বাস্থ্যের যেমন উন্নতি দরকার, শিক্ষার ও তেমন উন্নতি দরকার কারণ স্বাস্থ্য ও শিক্ষার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সুবিধার উন্নতি প্রয়োজন। নারী পুরুষের বৈষম্য দূর করা যদিও এর কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এরপরও বলবো এখনো আমরা পুরোপুরি উন্নতি করতে পারিনি। নারীর নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে, খাদ্য নিরাপত্তা সেই বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হবে। যদিও আমাদের সরকার বিভিন্নভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দিয়েছেন কিন্তু সেভাবে মানা হয়নি। প্রথম দিকে যে আতঙ্ক ছিল উদ্বেগ ছিল সেটির থেকে মানুষ নতুন সাধারণ জীবনে পদার্পণ করেছে ঠিক সেই সময় করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্ব গতি মানুষকে আবার উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে দিয়েছে আর ঠিক সেই সময় আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালন করতে যাচ্ছি।
পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি নির্বিচারে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক সম্মিলিত কৃষি উৎপাদিত পণ্য এবং ভেজাল ও বিষাক্ত পদার্থ মিশ্রিত খাদ্যের কারণে এদেশের মানুষ আজ মারাত্মক স্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখিন। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব না দেয়া, চিকিৎসা ব্যবস্থায় মারাত্মক দূর্বলতা এবং অপ্রতুল চিকিৎসা সুবিধার কারণে এদেশের জনগণ সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত। এখানে আর্থিক স্বচ্ছলতার অভাবে অনেকেই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করতে পারছেন না। অনেকই জটিল রোগে চিকিৎসা করতে তাদের স্থাবর অস্থাবর সম্পতি বিক্রি করতে বাধ্য হন।
সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা সত্তে¦ও জনগণের মৌলিক চাহিদা বিশেষ করে নিরাপদ ও পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য, নিরাপদ ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা, সুস্থ পরিবেশ, ইত্যাদি এখনও নিশ্চিত হয়নি। বরং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা-অব্যবস্থাপনায় এসকল মৌলিক চাহিদা আজ হুমকির মুখে। রাষ্ট্রের দায়িত¦ জনগণের এসব মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণ করে প্রতিশ্রুত সেবা নিশ্চিত করা। কিন্তু রাষ্ট্র সে দায়িত্ব কতটুকু পালন করছে? শুধুমাত্র হাসপাতাল, ক্লিনিক স্থাপন করে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা; পানি,বায়ু, মাটি, শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা; জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমেই সবার জন্য সর্বত্র সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। শুধুমাত্র প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে এলক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে নিরাপদ ও পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য, সুস্থ পরিবেশ, দূষণমুক্ত পানি ও বায়ু, মাদক ও তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, মাঠ, পার্ক, জলাধার, হাঁটার পথ ব্যবহার উপযোগীতার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা হিসাবে আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত প্রয়োজনীয় সংখ্যক হাসপাতাল ও ডায়গোনস্টিক সেন্টার স্থাপন, চিকিৎসক, সেবিকা, প্যারামেডিক্স ও অন্য সহযোগী নিয়োগ, তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানসম্মত দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। এছাড়াও জনগণকে সচেতন করতে হবে।আর অসংক্রামক রোগের জন্য আমাদের লাইফস্টাইল ও পরিবেশের পরিবর্তনগুলো দায়ী। আমাদের শারীরিক পরিশ্রমের প্রবণতা মারাত্মকভাবে কমে গেছে। ফলে আমাদের ওজন বাড়ছে, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ দেখা দিচ্ছে। শহরগুলোতে জায়গার অভাব, গ্রামাঞ্চলে জায়গার অভাব না থাকলেও পরিশ্রমে মানুষের অনীহা রয়েছে। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে নীতিমালা ও আইনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিদ্যমান নীতিমালা ও আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসব রোগ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানোর দিকেও জোর দিতে হবে। সংক্রামক রোগের সঙ্গে দারিদ্রের একটা সম্পর্ক আছে, অসংক্রামক রোগের সঙ্গে উন্নয়নের। আমরা যত উন্নতির দিকে যাচ্ছি, ততই অসংক্রামক রোগ বাড়ছে। নগরজীবনে অসংক্রামক রোগ বেড়ে যাওয়ার কারণ মাঠ, পার্ক, জলাধার, হাঁটার পথ নেই। শব্দও বায়ু দূষণ সহনীয় মাত্রার কয়েকগুণ।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার কথা বলতে গেলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কথা অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়। বঙ্গবন্ধু স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যকে সংবিধানের মূল অধিকারের অংশ হিসেবে সংযোজন, প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যকে গুরুত্বদান, গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, চিকিৎসকদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদান, বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ গঠন ইত্যাদি। জাতির জনকের চিন্তাচেতনা বহু গুণে অ্যাডভান্স ছিল। বঙ্গবন্ধু প্রতিটি গ্রাম বা ওয়ার্ডে একজন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োজিত রাখার কথা বলেছিলেন, যার কাজ হলো প্রতিটি বাড়ি ঘুরে ঘুরে মানুষের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেওয়া। অসুস্থ লোক থাকলে তাকে চিহ্নিত করে ইউনিয়ন সাব-সেন্টারে নিয়ে যাওয়া। বঙ্গবন্ধুর আমলে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ইউনিয়নে সাব-সেন্টারসমূহ ও থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহ যাতে নির্ধারিত সময়ের (১৯৭৮) মধ্যেই তৈরি হয়, সেভাবেই পরিকল্পনা করেছিলেন। কারণ ইউনিয়নে সাব-সেন্টারসমূহ ও থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহ যথাসময়ে তৈরি হলে দেশের সব মানুষকে চিকিৎসাসেবার আওতায় আনা সম্ভব হবে। বঙ্গবন্ধু শুধু দেশকে প্রতিষ্ঠা ও শক্রমুক্ত করে যাননি; মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা—অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু কতটা জনকল্যাণমুখী ছিলেন বর্তমান সময়েও আমরা তা ভেবে অবাক হয়ে যাই।
বঙ্গবন্ধুর কনসেপ্ট বা চিন্তা ও ধ্যানধারণা নিয়েই আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক খুলেছেন। এ কারণেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার চেষ্টা করছি। মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে দেশের সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্যস্বাধীন দেশে তৃণমূল পর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকের ধারণা প্রবর্তন করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরেই দেশের সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে তৎকালীন মহকুমা ও থানা পর্যায়ে স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে তুলেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেই দেশব্যাপী প্রতি ৬ হাজার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি করে মোট ১৮ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কমিউনিটি ক্লিনিকে কোভিড ভ্যাকসিন প্রদানসহ প্রাথমিক স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টিসেবা কার্যক্রম চালু রয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—এটি সরকার ও জনগণের সম্মিলিত অংশীদারিত্বের একটি সফল কার্যক্রম, যার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা এবং স্থায়িত্বের লক্ষ্যে সরকার ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন’ পাশ করেছে। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সারা দেশের প্রান্তিক জনগণের স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টি সেবাসহ বিনা মূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা সামগ্রী প্রদান করা হচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে, বঙ্গবন্ধুর পথ ধরেই জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের মেডিক্যাল শিক্ষা, চিকিৎসা সেবা ও গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। দেশে বর্তমানে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা পাঁচটি, সরকারি মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা ৩৮টি, এর মূলে রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদান।
আমাদের মনে রাখতে হবে, সারা বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ দৈনিক আয়ের জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করছে জীবনের সঙ্গে, আবাসনসংকট প্রকট এবং সুশিক্ষার ক্ষেত্রে সীমিত সুযোগ পাচ্ছে, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সুযোগের অভাব, বৃহত্তর লিঙ্গবৈষম্য, নিরাপদ পরিবেশ, বিশুদ্ধ পানি, নির্মল বায়ু ও নিরাপদ খাদ্যসংকট এবং সংকটাপন্ন স্বাস্থ্য পরিষেবা।
এর সঙ্গে রয়েছে কোভিড-১৯-এর কারণে সৃষ্ট সমস্যা। এসব বিষয় মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এজন্য প্রত্যেকের জীবনযাত্রার মানোন্নতকরণে, সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিশ্বনেতৃত্বকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ব নেতাদের অবশ্যই বদ্ধপরিকর হতে হবে। সংক্রামক রোগের কারণে সৃষ্ট মহামারি মোকাবিলার বিষয়টিও আমাদের স্মরণে রাখতে হবে। গোটা বিশ্বব্যাপী সুরক্ষা, পরীক্ষানিরীক্ষা এবং সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবায় সবার সমান সুযোগ যতটা নিশ্চিত করা সম্ভব, তা পূরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা ও অংশগ্রহণও বৃদ্ধি করতে হবে।
পরিশেষে বলতে চাই,সুস্থ জীবনের প্রয়োজন অনুধাবন করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের মূল লক্ষ্য। আমারা আমাদের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল নই বিদায় আমরা আমাদের খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম ও কাজের প্রতি তেমন গুরুত্ব দেই না। আর আমরা যখন অসুস্থ হয়ে পড়ি তখনি সুস্থতার অনুধাবন করি। আমাদেরকে উপলব্ধি করতে হবে যে, সুস্থতাই একজন মানুষের বড় নেয়ামত।
বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান রোগ-ব্যাধির কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছে।প্রতিবছর নতুন নতুন মহামারি, রোগব্যাধির সৃষ্টি হচ্ছে, ফলে সাধারণ জনগণের মধ্যে আতংকের সৃষ্টি হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোকে সবার সামনে তুলে ধরা হয় এবং এই ধরনের মহামারীকে মোকাবেলা করার জন্য একটি থিম তৈরি করে সঠিক স্বাস্থ্য সেবা সকলের জন্য নিশ্চিত করার লক্ষে সারা বিশ্বজুড়ে অসংখ্য ইভেন্ট এবং সেবার আয়োজন করা হয়।
মানুষের অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং আচরণ থেকে মুক্তি পাওয়ার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনের দিকে অগ্রসর হওয়া উচিত, বিশেষ করে যারা উচ্চ রক্তচাপ বা অন্য কোনও অসুস্থতার জন্য ওষুধ খান।
নিজ স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়ার পাশাপাশি, এলাকার অনন্যা মানুষ ও আত্মীয়-স্বজনরাও যেন তাদের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হন সে দিকে লক্ষ্য রাখা। স্বাস্থ্য দিবসের একটি বড় উপাদান হল একটি স্বাস্থকর জীবনধারা এবং আপনার চারপাশের একটি স্বাস্থ্যকর পৃথিবী।
যে কোনও স্ট্রেসফুল পরিস্থিতিকে এড়িয়ে চলুন।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরো আটটি দিবস পালন করে থাকে যে আটটি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রচার মূলক কাজ করে থাকে, তার অন্যতম হল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। অন্যগুলি হল, বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস, বিশ্ব রোগ প্রতিরোধ সপ্তাহ, বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস, বিশ্ব তামাক বিরোধী দিবস, বিশ্ব রক্তদাতা দিবস, বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস এবং বিশ্ব এইডস দিবস।স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা ও উদ্বেগগুলির প্রতি সাধারণ জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এটি একটি বার্ষিক ইভেন্ট হিসেবে পালিত হয়, একটি নির্দিষ্ট থিম নির্বাচিত করা হয় সারা বছরব্যাপী স্বাস্থ্য কার্যক্রম চালানো জন্য। আর বিশ্ববাসীর জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে অবশ্যই আমরা সক্ষম হব এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে আরও শক্তিশালী করে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবাকে পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এই হোক ২০২৪ সালের ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।
লেখক, কলাম লেখক ও গবেষক
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
Comments