
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সফরকে কেন্দ্র করে যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনাসহ ভারত–রাশিয়া সামরিক সহযোগিতায় নতুন আলোচনা শুরু হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের চাপ থাকা সত্ত্বেও ভারতের সামরিক সরঞ্জামের বড় অংশ এখনো রাশিয়া থেকে আমদানি হয়। এসব রক্ষণাবেক্ষণেও রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা অব্যাহত রয়েছে বলে খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের।
যুক্তরাষ্ট্র ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের তেল বাণিজ্যে ভাটা পড়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, তেল থেকে ক্ষতি হওয়ার পরও সামরিক সরঞ্জাম খাতে সেই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে পারে রাশিয়া।
চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষার জন্য ভারত প্রতিবছর সামরিক সরঞ্জামে বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। বর্তমানে ভারতের ব্যবহৃত অধিকাংশ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যুদ্ধবিমান, রাইফেল ও ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার তৈরি।
ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনে ভারত নতুন এস–৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার ঘোষণা আসতে পারে। গত মে মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে চার দিনের সংঘাতে আকাশ প্রতিরক্ষায় এস–৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ হ্যাপিমন জ্যাকব নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ভারত তাদের অস্ত্রের উৎস বৈচিত্র্যময় করলেও এখনো তাদের সামরিক সরঞ্জামের '৬০ শতাংশের বেশি' রাশিয়ান।
সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, পুতিনের সফরকালে ভারত রুশ যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার আলোচনা শুরু করতে পারে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের লেনদেন কম দেখতে চায়।
পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান সুখোই-৫৭ ও রুশ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৫০০। ছবি: রয়টার্স
ভারত–রাশিয়ার বিশেষ কৌশলগত অংশীদারত্বের আওতায় সুখোই–৫৭ যুদ্ধবিমান ও উন্নত এস–৫০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হবে বলে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
নরেন্দ্র মোদি রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছেন।
সম্প্রতি পশ্চিমা দেশগুলো থেকে বেশি অস্ত্র কেনার মাধ্যমে ভারত রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কিছুটা কমালেও স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সাল পর্যন্ত রাশিয়াই ভারতের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী রয়ে গেছে।
ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং ব্লুমবার্গকে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দীর্ঘদিনের, এবং এটি বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই।
তিনি জানান, ভারত সরঞ্জাম কিনতে থাকবে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—উভয় দেশ থেকেই।
বর্তমানে ভারতের কাছে ২০০টির বেশি রুশ যুদ্ধবিমান ও একাধিক এস–৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।
বিমানবাহিনীর ঘাটতি মেটাতে আরও উন্নত রাশিয়ান যুদ্ধবিমান কেনার অনুরোধও করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্লুমবার্গ।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সুখোই–৫৭ বিমানের দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ভারতকে অতিরিক্ত সক্ষমতা দেবে। তবে পুতিনের সফরে নতুন কোনো বড় সামরিক কেনাকাটার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
রয়টার্সও জানায়, পুতিনের সফরকালে রুশ যুদ্ধবিমান ও এস–৫০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ভারতে আলোচনা শুরু হতে পারে।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার ব্লুমবার্গ তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, পুতিনের ভারত সফরকালে ২ বিলিয়ন ডলারের সাবমেরিন চুক্তি হতে পারে। ভারত সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো অবশ্য প্রতিবেদনটিকে 'বিভ্রান্তিকর' বলেছে।
দ্য হিন্দু জানায়, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার মতে, ভারত–রাশিয়া ২৩তম বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন পর্যায়ে নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে। তার মতে, এবার আলোচনার পরিধি জ্বালানি ও প্রতিরক্ষার বাইরে অনাবিষ্কৃত নানা খাতে বিস্তৃতও হতে পারে।
সাত মন্ত্রীসহ উচ্চ পর্যায়ের রুশ প্রতিনিধিদলের উপস্থিতি দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করার প্রচেষ্টাকেই প্রতিফলিত করে।
ভারত আশা করছে, রাশিয়া ভারতীয় পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে আরও গুরুত্ব দেবে। বিশেষ করে যেসব খাতে সহযোগিতা এখনো সীমিত।
কৃষি ও সামুদ্রিক পণ্য, প্রকৌশল সামগ্রী, আইটি সেবা, ভারতের মহাকাশ কর্মসূচিতে প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং রাশিয়ায় ভারতের ইউরিয়া কারখানা স্থাপনের মতো খাতগুলো আলোচনার প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।
Comments