বিশ্বব্যাপী বিমান দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে চলায় ২০২৪ সালটি বিমান পরিবহন খাতের জন্য একটি অশনি সংকেত বহন করে এসেছে। বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, বিভিন্ন দেশে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। সালটি বিমান চলাচলের ইতিহাসে একাধিক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনাগুলো যাত্রী সুরক্ষা এবং বিমান চলাচল ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনাগুলোর ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো...
জানুয়ারি: জাপানের টোকিও বিমানবন্দরে সংঘর্ষ
বছরের শুরুতেই, ২ জানুয়ারি, জাপানের টোকিও বিমানবন্দরে জাপান এয়ারলাইন্সের একটি এয়ারবাস এ৩৫০-৯০০ অবতরণের সময় কোস্টগার্ডের একটি বিমানের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এই ঘটনায় কোস্টগার্ডের ৫ জন কর্মী নিহত হন, তবে যাত্রীদের সবাই প্রাণে বেঁচে যান। তদন্তে অবতরণ প্রক্রিয়ায় ভুল বোঝাবুঝি এবং যোগাযোগে ত্রুটির কথা উঠে আসে।
আগস্ট: ব্রাজিলে বিমান বিধ্বস্ত
৯ আগস্ট ব্রাজিলের ভিনহেডো শহরে ভিওপাস এয়ারলাইন্সের একটি এটিআর ৭২-৫০০ বিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। বিমানে থাকা ৬২ জন আরোহীর সবাই প্রাণ হারান। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, পূর্বে সনাক্ত হওয়া কারিগরি ত্রুটি যথাযথভাবে সমাধান না করায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ডিসেম্বর: একের পর এক দুর্ঘটনা
ডিসেম্বর মাসে বিমান চলাচল আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। মাত্র ১৩ দিনের মধ্যে ৮টি বিমান দুর্ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে ২৯ ডিসেম্বর ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ।
দক্ষিণ কোরিয়া: মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জেজু এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ অবতরণের সময় দুর্ঘটনায় পড়ে। বিমানে থাকা ১৮১ জনের মধ্যে ১৭৯ জন নিহত হন। পাখির আঘাত এবং খারাপ আবহাওয়াকে দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে।
কানাডা: দেশটির হ্যালিফ্যাক্স বিমানবন্দরে ঘটল বিমান দুর্ঘটনা। অবতরণের সময় বিমানের একটি অংশে আগুন লেগে যায় বলে খবর। হতাহতের খবর না মিললেও আতঙ্কে রয়েছেন ক্রু সদস্য-সহ যাত্রীরা। দক্ষিণ কোরিয়ান মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান দুর্ঘটনার মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ঘটে এই ঘটনা।
আজারবাইজান: ২৫ ডিসেম্বর আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের একটি এমব্রেয়ার ইআরজে-১৯০এআর বিমান কাজাখস্তানের আকতাউ বিমানবন্দরের কাছে অবতরণের আগে বিধ্বস্ত হয়, যাতে ৩৮ জন নিহত হন।
ডিসেম্বর মাসে এই ছয়টি দুর্ঘটনায় মোট ২৩৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যা বছরের শেষ মাসটিকে বিমান চলাচলের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক করে তুলেছে।
২০২৪ সালে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনাগুলো বিমান চলাচল নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা আরও জোরালোভাবে তুলে ধরেছে।
এই দুর্ঘটনাগুলোর প্রভাব বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মানবিক ক্ষতির পাশাপাশি বিমান পরিবহন খাতেও গভীর প্রভাব পড়েছে। অসংখ্য মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি বিমান সংস্থাগুলোকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, এই দুর্ঘটনাগুলোর ফলে মানুষের মধ্যে বিমান যাত্রার প্রতি আস্থা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা বিমান পরিবহন খাতে মন্দা সৃষ্টি করতে পারে।
ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে বিশেষজ্ঞরা বিমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার ওপর জোর দিচ্ছেন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিমান দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন তারা। পাশাপাশি পাইলটদের আরও ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য আরও সঠিকভাবে সংগ্রহ করে পাইলটদের সতর্ক করার ওপরও জোর দেওয়া হচ্ছে।
বিমান দুর্ঘটনা একটি জটিল সমস্যা এবং এর সমাধানের জন্য সবার যৌথ প্রচেষ্টা প্রয়োজন। প্রযুক্তিগত ত্রুটি, মানবিক ভুল এবং প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা মোকাবেলায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়।
Comments