চলতি একবিংশ শতকে তথ্য সংগ্রহ এবং তা ছড়িয়ে দিতে সামাজিক গণমাধ্যম প্রধান হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক গণমাধমের ভূমিকা সাধারণ জনগণের উপলব্ধি ব্যবস্থাপনায় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্মার্ট ইনসাইট মিডিয়ার এক প্রতিবেদন অনুসারে বিশ্বব্যাপী ৪.৬২ বিলিয়ন মানুষ সক্রিয়ভাবে ফেইসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রামের মত বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহার করছে। আর এসব সামাজিক গণমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে পক্ষপাতমূলক এবং রাষ্ট্রবিরোধী গোষ্ঠী সমাজে ভীতি ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। এসব গোষ্ঠী বিভিন্ন লবিস্টদের ছত্রচ্ছয়ায় সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে কাজ করছে। এরা অন্যান্য গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, সংগঠন এবং রাষ্ট্রের ক্ষতিসাধনে বিদ্বেষী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
সামাজিক গণমাধ্যম বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত বিষয়ের অনানুষ্ঠানিক অন্তর্দৃষ্টি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। তাই বাস্তব অবস্থান অথবা সামাজিক গণমাধ্যমে প্রভাবের বিষয়ে ব্যবহারকারীদের সংবেদনশীল করতে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের বিনোদনমূলক দিক নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। এতে সামাজিক গণমাধ্যমে গুজব ছড়ানো কমিয়ে আনতে সাহায্য করা যাবে। কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে জনগণকে সঠিক ধারণা লাভে সহায়তা করতে এসব প্ল্যাটফর্মের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে তাদের প্ল্যাটফর্মে তথ্যের ইতিবাচক এবং বাস্তব প্রচার নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, সংগঠন এবং অন্যান্য টার্গেটেড গ্রুপের ক্ষতিসাধনে সামাজিক গণমাধ্যম একটি টুল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহারকারীদের কোন কনটেন্ট পোস্ট করার সময় অন্য রাষ্ট্রের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি অবশ্যই সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।
কোন বিষয়ে সচেতনতা এবং প্রকৃত ঘটনা ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় অঙ্গনে উপরোক্ত বিষয়টি ছড়িয়ে দেয়া অত্যন্ত জরুরী যা সাধারণ জনগণের পারসেপশন পরিবর্তনে সহায়তা করবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ইতিবাচক বিষয়গুলো সম্প্রর্কে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, ভাতৃত্ব এবং সাধারণ জনগণকে সংবেদী বা সুগ্রাহী করে তুলতে বিভিন্ন সেমিনার বা ওয়েবিনার কনফারেন্স করা যেতে পারে।
সামাজিক গণমাধ্যমের প্ল্যাটফরমগুলো কোন নির্দিষ্ট গ্রুপের, সম্প্রদায় এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং গুজব ছড়াতে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর এই প্রবনতা বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং সেই সাথে অভ্যন্তরীণ জনগোষ্ঠীর দ্বিপাক্ষিক বন্ধনে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগতভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কোন নিদিষ্ট গোষ্ঠী, সম্প্রদায় এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এ ধরণের গুজব এবং ক্ষতিকর প্রচারণা এড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইনী কার্যালয়ের উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সামাজিক গণমাধ্যমে রাষ্ট্র এবং সংগঠন বিরোধী প্রচারণা বন্ধে তাদের সংশ্লিষ্ট দেশে সামাজিক গণমাধ্যম কার্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে তাদের প্রতিপক্ষকে এগিয়ে আসতে বলার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
সামাজিক গণমাধ্যম হচ্ছে যোগাযোগ এবং উপলব্ধি গঠনের প্রধান হাতিয়ার। সারা বিশ্বের সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্ল্যাটফর্মের গুরুত্বকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। বরং এর সর্বোচ্চ ব্যবহার পেতে পূনরায় মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। উন্নত এবং উন্নয়নশীল উভয় দেশগুলো তাদের জাতীয় স্বার্থ অর্জনে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে। পাকিস্তানে ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যূতির পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উপলব্ধি ব্যবস্থাপনায় সামাজিক গণমাধ্যমের গুরুত্ব এবং এর ভূমিকা উঠে আসার প্রবনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
একইভাবে সমাজের সর্বোস্তরের মানুষ সক্রিয়ভাবে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারও করছে। তারা সমাজের বিভিন্ন অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষাবিষয়ক বিষয়গুলো তুলে ধরছে যা উপলব্ধি ব্যবস্থাপনা এবং নীতি প্রণয়নের জন্য প্রধান বিষয়। তাই এই প্ল্যাটফর্মের কার্যকারিতা নিশ্চিত ও রক্ষা করতে হবে। এই প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারকালীণ কারো অন্যজনের সৃষ্টিশীল মনের মেধাস্বত্ত ছিনতাই করা উচিৎ হবেনা। সামাজিক গণমাধ্যম প্ল্যাটফর্মের ব্যবস্থাপনাকে এ বিষয়টিকে নিয়েও কাজ করতে হবে।
বিভিন্ন সমাজের মধ্যে ভীতি ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে কতিপয় লোক, গোষ্ঠী এবং রাষ্ট্র কর্তৃক টার্গেটেড এ্যাটেম্ট সামাজিক গণমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোতে বেসরকারী অ্যাকটরের উপস্থিতিও এক ধরনের লক্ষকবচ। তারা কতিপয় রাষ্ট্র এবং জনগণের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে যা বন্ধ হওয়া জরুরী। একইভাবে, কতিপয় গোষ্ঠী এবং রাষ্ট্রের সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহারের মাধ্যমে ধর্ম অবমাননা, ইসলামোফোবিয়া এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের মানহানি করে তাদের কায়েমি স্বার্থ হাসিলেরও চেষ্টা করছে। এটা অত্যন্ত দূঃখজনক যে কতিপয় শত্রুপক্ষীয় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিশৃংখলা এবং গুজব ছড়াতে টুইটার, ফেইসবুক এবং ইন্সটাগ্রামের মত প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে। এসব এখনই বন্ধ করা উচিৎ। আর এ দায়-দায়িত্ব এসব প্ল্যাটফর্মের শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের।
Comments