লেখাপড়াসহ বিভিন্ন কাজে দেশের বাইরে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের স্ব-স্ব ক্ষেত্রে অর্জিত জ্ঞান দেশের কল্যাণে ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান । গত ১৬ মার্চ নাসার আমন্ত্রণে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হ্যাকাথন নাসা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস এ্যাপস চ্যালেঞ্জে ২০১৮ এবং ২০২১ সালে বিশ্বজয়ী বাংলাদেশি দু'টি তরুণ দল ওয়াশিংটন ডিসিতে দু'দিনব্যাপী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে বাংলাদেশ দূতাবাসে এক সৌজন্য সাক্ষাৎকারে এলে তিনি এই আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার এজেডএম সাজ্জাদ হোসেন, বাংলাদেশের পক্ষে নাসা কোঅর্ডিনেটর এম মাহ্দী উজজামান এবং বাংলাদেশের কূটনীতি বিষয়ক প্রথম অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা ডিপ্লোমেট ডট কমের ওয়াশিংটন ডিসি প্রতিনিধি শাহিদ মোবাশ্বের এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্বজয়ী বাংলাদেশি তরুণ দলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমরা সবাই নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি এবং এই স্পিরিট নিয়েই দেশে-বিদেশে লেখাপড়া শেষে নিজেদের প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নিজ দেশের জন্য অবদান রাখতে হবে। দিনের শেষে একজন নাগরিক হিসাবে আমাদের দেশের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। তিনি নাসা সদর দপ্তরে বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরায় তরুন দল দুটোর প্রতি ধন্যবাদও জ্ঞাপন করেন।
ওয়াশিংটন ডিসি-ভিত্তিক বাংলাদেশী আমেরিকান আইটি প্রোফেশনালস অর্গানাইজেশন- বাইটপো এবং ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি- ডব্লিউইউএসটিও বাংলাদেশের মেধাবী এই তরুণ দলের জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করে।
গত বুধবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে নাসা আয়োজিত দু'দিনব্যাপী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত সংস্থাটির হেডকোয়ার্টারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হ্যাকাথন নাসা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস এ্যাপস চ্যালেঞ্জে ২০১৮ এবং ২০২১ সালে বিশ্বজয়ী বাংলাদেশী তরুণ দুইটি দলের ৮ জন সদস্য আসে। অনুষ্ঠানে সম্মাননা গ্রহণের পাশাপাশি দল দু'টি নাসার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মিশনগুলোর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং গবেষকদের সাথে মত বিনিময়ে অংশ নেন।
২০১৮ সালে সিলেট থেকে ৫ তরুণের দল টিম 'অলিক' "বেস্ট ইউজ অফ ডেটা" ক্যাটাগরিতে বিশ্বের প্রায় ২৭০০ দলকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। তাদের তৈরীকৃত প্রজেক্টে পৃথিবী যে কোন প্রান্ত থেকে যে কেউ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তির মাধ্যমে চাঁদে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন। এছাড়াও চাঁদ থেকে সূর্যগ্রহণসহ এ্যাপোলো মিশনে ল্যান্ডিং সাইটগুলো অবলোকন করা যাবে। অপরদিকে ২০২১ সালে খুলনা থেকে বিজয়ী টিম 'মহাকাশ' অন্য গ্রহে অভিযানের সময়ে মহাকাশচারীদের বিভিন্ন কার্যকলাপের জন্য "এআরএসএস" নামক একটি টুল উদ্ভাবন করে। এই টুল দিয়ে মহাকাশচারীরা স্যাম্পল সংগ্রহ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের ম্যাটেরিয়াল হ্যান্ডলিং কাজ সহজেই সম্পাদন করতে পারবে। উল্লেখ্য তাদের প্রজেক্টটি বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে নাসাসহ আরো ১০ টি মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক এবং প্রকৌশলীদের কর্তৃক পর্যালোচিত হয় এবং ১৬২ টি দেশের ৪,৫০০ টিরও অধিক দলের মধ্যে সব থেকে বাস্তবধর্মী প্রজেক্ট হিসেবে "বেস্ট মিশন কনসেপ্ট এয়ার্ড" ক্যাটাগরিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়।
অনুষ্ঠান শেষে “ওয়ালপস ফ্লাইট ফ্যাসিলিটি সেন্টার” থেকে “সিগনাস” রকেট উৎক্ষেপন দেখার নিমন্ত্রণ পায় দল দু'টি, কিন্তু আবহাওয়াজনিত কারনে উৎক্ষেপন পিছিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বিগত ১০ বছর ধরে সুনামের সাথে অংশগ্রহণ করে আসছে। ২০১৮ এবং ২০২১ এর পরে ২০২২ সালেও বাংলাদেশ বিজয়ী হয়েছে। সংস্থাটির কাছে বৈশ্বিক এবং মহাকাশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে।
Comments