আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার কাছে ফোয়ারার সামনে জমায়েত শুরু হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা এতে যোগ দিয়েছেন।
আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর জমায়েত শুরু হয়। বেলা ২টা ৪০ মিনিটের দিকে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্যে দিয়ে জমায়েতের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। মঞ্চ থেকে নানা স্লোগান দেওয়া হচ্ছে৷ স্লোগানের এক ফাঁকে মঞ্চ থেকে মাইকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, 'আমাদের লড়াই মাত্র শুরু হয়েছে৷ এই কর্মসূচির ব্যাপ্তি একদিনও হতে পারে, এক মাসও হতে পারে৷ যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণা আসছে, ততক্ষণ আমাদের রাজপথে থাকতে হবে৷'
জুমার পর তীব্র গরমের মধ্যেই মুসল্লি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা এই জমায়েতে যোগ দিতে আসেন৷ জুমার নামাজের পর মঞ্চ থেকে যাঁদের উপস্থিত হওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে আছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ প্রমুখ৷
এই প্রতিবেদন লেখার সময় মঞ্চ থেকে 'একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর', 'লীগ ধর, জেলে ভর', 'ব্যান ব্যান, আওয়ামী লীগ', 'কণ্ঠে আবার লাগা জোর, আওয়ামী লীগের কবর খোঁড়', 'ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামী লীগ নো মোর’, ‘নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ চাই’, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চাই' প্রভৃতি স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল৷ স্লোগানের ফাঁকে ফাঁকে কেউ কেউ মাইকে কথা বলছেন৷ প্রতিবাদী কবিতাও আবৃত্তি করা হচ্ছে মঞ্চ থেকে৷
এর আগে ফোয়ারা থেকে পরীবাগ অভিমুখী সড়কের ওপর কিছু আন্দোলনকারীকে রং দিয়ে বিভিন্ন স্লোগান লিখতে দেখা গেছে৷ এসব স্লোগানের মধ্যে আছে 'চেয়ারের লোভ করে যে, আস্তাকুঁড়ে মরে সে', 'ক্ষমতা না জনতা?', 'জুলাই ঘোষণা?' ইত্যাদি৷
পরীবাগ অভিমুখী সড়কে রং দিয়ে স্লোগান লেখা হচ্ছেছবি: সাজিদ হোসেন
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থানের ঘোষণা দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ৷ পরে রাত ১০টার দিক থেকে যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়৷ প্রথমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির নেতা-কর্মীরা হাসনাতের সঙ্গে অবস্থানে যোগ দেন৷
পরে রাত একটার দিকে মিছিল নিয়ে যমুনার সামনে যান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন৷ তাঁদের সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও ছিলেন৷ এনসিপির পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও রাতে বিক্ষোভে যোগ দেন৷ রাত একটার পর হেফাজতে ইসলামের বেশ কিছু নেতা-কর্মী যমুনার সামনে যান৷ রাত দেড়টার দিকে এবি পার্টির কিছু নেতা-কর্মী যমুনার সামনে উপস্থিত হন৷ রাত দুইটার দিকে সেখানে যান ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা৷
রাতভর বিক্ষোভ চলার পর আজ সকালে সেখানে যোগ দেন জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা৷ সকাল সাড়ে আটটার দিকে যমুনার সামনে চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে হাসনাত আবদুল্লাহ ও এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ঘোষণা দেন, বাদ জুমা যমুনার পশ্চিম পাশে ফোয়ারার সামনে বড় জমায়েত করা হবে৷ একইসঙ্গে বিক্ষোভ কর্মসূচিও চলমান থাকছে৷
এই ঘোষণা দেওয়ার সময় জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুল ইসলাম মাসুদসহ ইসলামপন্থী কয়েকটি দলের নেতা-কর্মীরা হাসনাত ও নাসীরুদ্দীনের সঙ্গে ছিলেন৷ হাসনাতদের এ ঘোষণার পর সেখানে মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হয়৷ পাঁচটি পিকআপভ্যান একত্রিত করে এই মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে৷
Comments