ছবি: ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
দুবাইয়ের উজ্জ্বল আকাশের নিচে আজ এক চমৎকার ক্রিকেট বিকেল। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল ইতিহাসের নতুন অধ্যায় রচনা করল। যখন তারা ভারতকে ৫০ রানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া কাপের শিরোপা জয় করল। গত আসরের আনন্দের স্মৃতি আবারো জীবন্ত হয়ে ওঠে। যখন দলটি সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারিয়ে প্রথম শিরোপা জিতেছিল।
বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংস দেখে শিরোপা জয়ের কোনো আভাস মেলেনি। উইকেট দেখে যেখানে মনে হয়েছিল ২৩০-২৪০ রানের সংগ্রহ দাঁড় করালে লড়াইটা হবে হাড্ডাহাড্ডির। কিন্তু বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা ১৯৮ রানে গুটিয়ে যায়। স্কোর বড় রা হওয়ার সম্ভাবনা ছেড়ে দিয়েছিলেন সমর্থকরা। কিন্তু জুনিয়র টাইগারদের বোলারদের তোপের মুখে দাঁড়াতেই পারেননি ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। হতাশার সঙ্গে হার মেনে মাঠ ছাড়েন তারা।
বাংলাদেশের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ভারতীয়রা ১৪৮ রানে থেমে যায়। এতে বাংলাদেশের উজ্জ্বল শিরোপা জয় নিশ্চিত হয়।
এর আগে দুবাইয়ে টস জিতে শুরুতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ভারত। শুরুটা খারাপও ছিল না। ৬৬ রানে ৩ উইকেট হারালে চতুর্থ উইকেটে জুটি গড়ে দলকে ভালো পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন শিহাব জেমস ও রিজান হাসান। ৬২ রানের জুটি গড়েন তারা।
জেমস ৬৭ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৪০ রানে ফিরতেই ঘটে ছন্দপতন। দ্রুত সময়ে উইকেট হারাতে থাকলে ১৬৭ রানেই পতন হয় অষ্টম উইকেটের। রিজান হাসান ষষ্ঠ উইকেট হিসেবে ৬৫ বলে ৩ চারে সর্বোচ্চ ৪৭ রানে ফিরেছেন। তখন দ্রুত গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ।
কিন্তু নবম উইকেটে ফরিদ হাসান ও মারুফ মৃধার ৩১ রানের জুটিতে স্কোর দুইশর কাছাকাছি গেছে। ফরিদ ৪৯ বলে ৩ চারে ৩৯ রানে ফিরতেই ১৯৮ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। মারুফ ১১ রানে অপরাজিত ছিলেন।
ভারতের হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন যুদ্ধজিৎ গুহ, চেতন শর্মা ও হার্দিক রাজ। একটি করে নিয়েছেন কিরন, কার্থিকেয়া ও মাত্রে।
তবে বাংলাদেশের ফিল্ডিংয়ের সময় একের পর এক জোরালো আবেদনে সাড়া মিলছে না আম্পায়ারের কাছ থেকে। সফট সিগন্যাল যাচ্ছিলো বাংলাদেশের বিপক্ষে। এমন সময় দায়িত্বটা যেন নিজের কাঁধে তুলে নিলেন ইকবাল হোসেন ইমন। পুরো আসরে দুর্দান্ত বোলিং করা ইমনের কাছ থেকে এলো লাইফলাইন পাওয়া এক ওভার।
বিপজ্জনক হয়ে ওঠা কেপি কার্তিকেয়া আর নিখিল কুমারকে একই ওভারে ফিরিয়ে ম্যাচে বাংলাদেশকে ফিরিয়েছেন ফর্মে থাকা এই পেসার। তিন বলের ব্যবধানে ইকবালের জোড়া ব্রেকথ্রু। ভারতের স্কোরবোর্ডে এই মুহূর্তে ৮৪ রান। উইকেট তারা হারিয়েছে ৭টি।
১৯৮ রানের ছোট পুঁজি। বাংলাদেশের দরকার ছিল ভাল একটা শুরু। দলীয় ৪ রানেই ফিরে গিয়েছেন আয়ুশ মহাত্রে। আল ফাহাদের দুর্দান্ত একটা ইনসুইংয়ে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন এই অলরাউন্ডার। আলোচিত বৈভব সুরিয়াবংশীকে খুব একটা বাড়তে দেননি মারুফ মৃধা। কাভারে শিহাব জেমসের কাছে ক্যাচ দিয়েছেন এই ব্যাটার। খানিক পরেই রিজান ফেরান ভারতীয় অধিনায়ক আন্দ্রে সিদ্ধার্থকে।
এরপরেই মূলত ম্যাচে ফেরার চেষ্টায় ভারত। কেপি কার্তিকেয়া আর মোহাম্মদ আমানের ২৯ রানের জুটি বেশ অনেকটাই এগিয়ে দেয় ভারতকে। আম্পায়ারের পক্ষ থেকে একাধিক সফট সিগন্যাল গিয়েছে বাংলাদেশের বিপক্ষে। যা নিয়ে মাঠে উত্তাপও ছড়িয়েছে বেশ।
এরপরেই ইকবাল ইমনের দুর্দান্ত এক স্পেল। একই ওভারে প্রায় একইরকমের ডেলিভারিতে ফেরান কার্তিকেয়া ও নিখিলকে। দুজনেই ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। এক ওভার পরেই ফের তার আঘাত। এ দফায় আউট হলেন হারভানশ পানগালিয়া। এ দফায়ও উইকেটের পেছনেই গিয়েছে ক্যাচ। বাংলাদেশও তাতে ম্যাচে ফিরেছে দারুণভাবে।
অনূর্ধ্ব ১৯ এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
Comments