বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫
Wednesday, 12 March, 2025

 আঞ্চলিক গতিশীলতার পুনর্বিবেচনা: অসম দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানের পথ চলা

মূল: সাদ হাফিজ
  02 Mar 2025, 14:36

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈরিতা
দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করেছে। দীর্ঘদিনের বিভাজন, দ্বন্দ্ব আর প্রতিযোগিতার ইতিহাসে উত্তাল দেশ দু'টি কয়েক দশক ধরে অস্বস্তিকর সহাবস্থান বজায় রেখে চলেছে। তাদের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে; বিশেষ করে সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তির দিক থেকে ভারত স্পষ্টভাবে পাকিস্তানকে অনেকটাই ছাড়িয়ে গেছে।

অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পাকিস্তান ভারতের উত্থানের সাথে তাল মিলিয়ে চলা ক্রমশ কঠিন বলে মনে করছে। এই ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা দেশ দুটির সম্পর্কের গতিশীলতায় মৌলিক অবস্থান বর্ণনা করে। পাকিস্তানকে তার কৌশলগুলিতে আর্থিক, সামাজিক এবং কূটনৈতিক ব্যয় সত্ত্বেও একটি প্রতিরক্ষামূলক ভঙ্গিতে রেখেছে। দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত ও বৈরিতা পাকিস্তানকে রাজনৈতিক স্থবিরতা, অর্থনৈতিক দুর্দশা এবং সামরিক আধিপত্যে জর্জরিত করে রেখেছে।


এই বিস্তৃত বৈষম্য পাকিস্তানকে কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি হতে বাধ্য করেছে। ভারত একটি প্রধান আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পাশাপাশি তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামরিক আধুনিকীকরণ এবং কৌশলগত জোট পাকিস্তানের সাথে একটি সম্পূর্ণ অসামঞ্জস্যতা সৃষ্টি করেছে। আর এই বিষয়টি পাকিস্তানকে শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সামরিক গঠন, পারমাণবিক প্রতিরোধ, কূটনৈতিক কৌশল, অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব এবং প্রক্সি বাহিনীর ব্যবহারসহ বিভিন্ন ব্যয়বহুল কৌশল গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে।

ভারতের প্রভাব প্রতিহত করার জন্য পাকিস্তান কূটনৈতিক সমাধানের পথ অনুসরণ করার পাশাপাশি বাহ্যিক মৈত্রী স্থাপন করেছে - বিশেষ করে  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সাথে। আর এই ভারসাম্যমূলক কাজটি প্রায়শই কূটনৈতিক উত্তেজনার দিকে পরিচালিত করে আসছে।

চীনের সাথে পাকিস্তানের গভীর সম্পর্ক, বিশেষ করে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের (সিপিইসি) মাধ্যমে বেইজিংয়ের ওপর দেশটির নির্ভরশীলতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীন পাকিস্থানের জন্য বিভিন্ন সুবিধা এবং সামরিক সহযোগিতা প্রদান করলেও অন্যান্য বৈশ্বিক শক্তিকে দেশটি থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার ঝুঁকিতেও রেখেছে।

উপরন্তু, পাকিস্তানের জনসংখ্যার কিছু অংশ দেশের বৈদেশিক নীতিকে বহিরাগত শক্তির উপর অত্যধিক নির্ভরশীল হিসাবে দেখে আসছে, বিশেষত সম্ভাব্যভাবে জাতীয় সার্বভৌমত্বের সাথে আপস করে। এই অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ পাকিস্তানের সূক্ষ্ম ভূ-রাজনৈতিক কৌশলে জটিলতা যোগ করছে।

সামগ্রিকভাবে, জাতীয় স্বায়ত্তশাসনের উদ্বেগ এবং প্রতিযোগিতামূলক স্বার্থের মাঝখানে আটকা পড়ার ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রভাব বজায় রাখার জন্য পাকিস্তানকে অবশ্যই প্রধান শক্তিগুলির সাথে দেশটির সম্পর্কগুলোকে অতি সাবধানে পরিচালিত করতে হবে।

প্রক্সি সংঘাতে অব্যাহতভাবে জড়িত থাকার জন্য পাকিস্তানের ব্যয়বহুল কৌশল, বিশেষ করে কাশ্মীরে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির প্রতি তার কথিত সমর্থন, দেশটিকে আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা এবং নিন্দার দিকে পরিচালিত করেছে। এই কৌশলটি উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক খরচ বহন করছে, পশ্চিমা দেশগুলি- বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃহত্তর সন্ত্রাস দমন প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে এই কার্যকলাপগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পাকিস্তানকে চাপ দিচ্ছে৷ প্রক্সি যুদ্ধ অঞ্চলগুলিকে অস্থিতিশীল করছে এবং পাকিস্তানের জন্য দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।এই প্রক্সি দ্বন্দ্বগুলিতে জড়িত হওয়ার অনাকাঙ্খিত পরিণতির জন্য চরমপন্থী গোষ্ঠীর উত্থান এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরে জঙ্গিবাদের বিস্তারকে আংশিকভাবে দায়ী করা যেতে পারে।

এই প্রক্সি যুদ্ধের মানবিক প্রভাব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এবং ভারত ও আফগানিস্তানের মত প্রতিবেশী দেশগুলিতে বেসামরিক হতাহত এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই পরিস্থিতি সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং সামরিক হস্তক্ষেপের জনসাধারণের ধারণার উপর স্থায়ী প্রভাব ফেলছে।

পাকিস্তান ভারতের আঞ্চলিক আধিপত্যের বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ক্রমশ অকার্যকর হয়ে পড়া ঐতিহ্যগত পদ্ধতির পুনর্বিবেচনা করার সময় এসেছে। ভারতের সামরিক শক্তি বা রাজনৈতিক প্রভাবের সাথে মেলানোর চেষ্টা পাকিস্তানের দুর্বলতাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে, প্রতিযোগিতার একটি টেকসই চক্র তৈরি করতে পারে। এর পরিবর্তে পাকিস্তানের উচিত বিকল্প কৌশলগুলি অন্বেষণ করা যা প্রচলিত শক্তির ভারসাম্যের বাইরে যায়। যেমন ভারতের সাথে অর্থনৈতিক সহযোগিতা গ্রহণ করা। পাকিস্তানের জন্য সামরিক প্রতিযোগিতা কার্যকর পথ না হয়ে বরং ভারতের সাথে অর্থনৈতিক সহযোগিতা অন্বেষণ একটি প্রতিশ্রুতিশীল বিকল্প হতে পারে। দেশ দুটির রাজনৈতিক এবং আঞ্চলিক বিরোধগুলি চ্যালেঞ্জ তৈরি করলেও দুই দেশের মধ্যে উন্নত সম্পর্কের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে উপেক্ষা করা ঠিক হবেনা।

দক্ষিণ এশিয়া অর্থনৈতিক সুযোগে সমৃদ্ধ। কিন্তু ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈরিতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় আঞ্চলিক সহযোগিতাকে দমিয়ে রেখেছে। রাজনৈতিক উত্তেজনা বছরের পর বছর ধরে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং ভাগ করা অবকাঠামো প্রকল্পগুলিকে বাধাগ্রস্ত করেছে৷ যেহেতু ভারত একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে ক্রমাগত আবির্ভূত হচ্ছে তাই পাকিস্তানের একটি প্রধান বাণিজ্য অংশীদার হিসাবে ভারতকে আলিঙ্গন করে এই অর্থনৈতিক সম্প্রসারণে অংশগ্রহণ করার এবং লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে৷

বিস্তীর্ণ বাজারে প্রবেশের মাধ্যমে এবং ভারতের সাথে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে, পাকিস্তান কেবল তার সমৃদ্ধিই বাড়াতে পারেনা বরং দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায়ও অবদান রাখতে পারে। এই কৌশলগত পরিবর্তন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রধান বৈশ্বিক শক্তিগুলির উৎসাহ এবং সমর্থন থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হতে পারে যাদের এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থ রয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে উদ্যোগগুলিকে সমর্থন করে দেশ দুটির উত্তেজনা কমাতে এবং স্থায়ী শান্তির প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। দুই দেশের মধ্যে একটি সহযোগিতামূলক অর্থনৈতিক সম্পর্ক আঞ্চলিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে এবং সশস্ত্র সংঘর্ষের সম্ভাবনা কম করবে।

এই পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের কাছে তার ভূমিকা নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার এবং ভারতের সাথে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে একটি নতুন পথ অনুসরণ করার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। শান্তি এবং পারস্পরিক সমৃদ্ধির জন্য একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার ভিত্তি স্থাপন করতে পারে যা কেবল এই দুটি দেশ নয় বরং সমগ্র অঞ্চলের জন্যই তা উপকার বয়ে আনবে।

নমনীয়তা, বাস্তববাদ গ্রহণ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার উপর দৃষ্টিদান দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার মূল চাবিকাঠি হতে পারে। গতিশীলতাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সহযোগিতায় স্থানান্তরিত করার মাধ্যমে পাকিস্তান নিজের এবং তার প্রতিবেশীদের জন্য নতুন সুযোগের ভাণ্ডার খুলে দিতে পারে যা শেষ পর্যন্ত আরও সুরেলা এবং সমন্বিত অঞ্চল গড়ে তুলতে পারে।

ভাষান্তর: শাহিদ মোবাশ্বের, ওয়াশিংটন ডিসি।

Comments

  • Latest
  • Popular

এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

শাপলা চত্বরের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে মামলা, হাসিনা-ইমরানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

যাত্রার ৪৫ দিন আগে ভিসার আবেদন করতে বলল থাই দূতাবাস

দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার ‘ডিক্লারেশন’ বাতিল

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সেনাবাহিনী নিয়ে ভুয়া খবরের প্রতিবাদ আইএসপিআরের

যুদ্ধ বন্ধে সৌদি আরবে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন

জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার বহাল, এবারের চূড়ান্ত তালিকায় নেই এম এ জি ওসমানী

হাসিনা-রেহানা-জয়-পুতুলসহ পরিবারের ১২৪ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধের আদেশ

গণ-অভ্যুত্থানের পর ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ককে ইতিবাচক দেখছে ৭৬% উত্তরদাতা

গণ–অভ্যুত্থানে পটপরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য সুযোগ এনে দিয়েছে

১০
পঞ্চগড় সীমান্তে গুলিতে বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনায় বিএসএফের দুঃখ প্রকাশ
পঞ্চগড়ের ভিতরগড় সীমান্তের ওপারে ভারতের অভ্যন্তরে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিক আল আমিন (৩৬) নিহত হওয়ার
ভারত-বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সম্পর্ক ‘অত্যন্ত শক্তিশালী’, উদ্বেগও আছে: ভারতের সেনাপ্রধান
বাংলাদেশ ও ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক এই মুহূর্তে ‘অত্যন্ত শক্তিশালী’ বলে উল্লেখ করেছেন ভারতের সেনাপ্রধান
জয়সোয়ালের ব্রিফিং / এখন বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সব বিষয়ের নিষ্পত্তি চায় ভারত
ভারত বাংলাদেশ সরকারকে আরও একবার মনে করিয়ে দিল, তারা চায় সে দেশের সরকার সংখ্যালঘুদের ওপর
বাংলাদেশ নিয়ে ভারত ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনা
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয়সহ বাংলাদেশ
Error!: SQLSTATE[42S22]: Column not found: 1054 Unknown column 'parent_cat_type' in 'field list'