স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রথম নারী সদস্য যিনি ফুলটাইম ডাক্তার হিসেবে মনক্লোয়া সরকারী হাসপাতালে যোগদান করেছেন। ঝুমা বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতির উপদেষ্টা কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবুল কালাম সেলিম ও বেগম সেলিমের মেঝ মেয়ে।
মাদ্রিদে মনক্লোয়া হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি, প্রায় ২৫ বছর পর সেই হাসপাতালেরই চিকিৎসক হয়ে স্বপ্ন পূরণ করলেন বাংলাদেশি পরিবারের সন্তান ঝুমা আক্তার (২৫)।
ঝুমার পরিবার বাস করে মাদ্রিদে। আদিনিবাস কুমিল্লায়।
রোববার(৫ ই মে) মাদ্রিদের মনক্লোয়া হাসপাতালে যোগ দিয়ে চিকিৎসা পেশা শুরু করেছেন ঝুমা। প্রবাসীরা বলছেন, স্পেনে তিনিই ‘প্রথম’ বাংলাদেশি চিকিৎসক।
ঝুমা আক্তার স্থানীয় স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে মেডিসিন বিষয় নিয়ে ভর্তি হন উনিভারসিদাদ অটোনোমো মাদ্রিদ বিশ্ববিদ্যালয়ে। মেডিসিন ও চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রতি আগ্রহ থেকেই স্বপ্ন দেখেন চিকিৎসক হওয়ার। অবশেষে তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়, যে হাসপাতালে ১৯৯৯ সালের ১৬ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেই হাসপাতালে চিকিৎসক হওয়ার মাধ্যমে।
বাবা-মা ও দুই বোনকে নিয়ে মাদ্রিদে বসবাস করেন ঝুমা আক্তার। বড় বোন সুমা নাহিদা আক্তার স্থাপত্য ও নগরায়ণ নিয়ে ইউনিভার্সিটি অফ আর্কিটেকচার আলকালা দে হেনারেসে পড়াশোনা করছেন। ছোট বোন জান্নাত আক্তার পড়ছেন লন্ডন কিং লো বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে।
ঝুমা বলেন, “আমি জন্মসূত্রে স্প্যানিশ হলেও মা-বাবার সাহায্যে বাংলায় কথা বলি। বাংলাদেশ ও বাংলা সংস্কৃতির প্রতি আমার অনেক আগ্রহ । বাংলা ও স্প্যানিশ উভয় সংস্কৃতির মানুষের কাছ থেকে ভালোবাসা পেতে চাই, তাদের সেবা করে যেতে চাই। পাশাপাশি চিকিৎসাশাস্ত্রে আরও পড়াশোনা করতে চাই।”
হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে ঝুমাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন প্রবাসীরা। স্পেনে বাংলাদেশি মানবাধিকার সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন ভালিয়েন্তে বাংলার’ সভাপতি মো. ফজলে এলাহী বলেন, “অভিবাসী বাংলাদেশি ছেলে-মেয়েদের একটা বড় অংশ লেখাপড়া শেষ করেননি বা করতে পারেননি। বেশিরভাগই প্রাথমিক কিংবা ও লেভেল থেকে ঝরে পড়েছেন। সংসারের হাল ধরেছেন। মা-বাবাকে আর্থিক সহযোগিতার জন্য কর্মজীবনে নেমে পড়েছেন। তাদের মধ্যে যারা লেখাপড়া শেষ করেছেন, তাদের একজন ঝুমা আক্তার।”
ঝুমা চিকিৎসা পেশা শুরু করায় উচ্ছ্বসিত তার পরিবার। তার কর্মস্থল মনক্লোয়া হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অভিবাসীরা। তার সাফল্যে স্পেনে বেড়ে উঠা ছেলে-মেয়ে ও অভিভাবকরা উৎসাহিত হবেন বলে আশা করছেন তারা।
ঝুমা আক্তার বলেন, “ছেলে-মেয়েদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হলে মা-বাবার উৎসাহ থাকতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার গুজব কিংবা অপপ্রচারে কান না দিয়ে আর্থিক ও মানসিকভাবে ছেলেমেয়েকে সহযোগিতা করতে হবে। আর ছেলে-মেয়েদের মধ্যেও চেষ্টা আর সাধনা থাকা প্রয়োজন।”
“অভিবাসী মা-বাবাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রতি সম্মান জানানোর জন্য হলেও আমাদের যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। লেখাপড়া করে তাদের ও কমিউনিটির মুখ উজ্জ্বল করতে হবে।
Comments