ইদানিং ইন্টারনেট প্রযুক্তিতে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়টি বেশ জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে। ইন্টারনেট প্রযুক্তির সাথে জড়িত প্রযুক্তিবিদরা এর ব্যবহারিক জ্ঞানও উত্তরোত্তর রপ্ত করছেন। তবে সাধারণ জনগণের কাছে বিষয়টি বেশ দূর্বোধ্য বিধায় এ সংক্রান্ত জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে এমন সব কাজ যা কৃত্রিমভাবে কিছু তৈরিতে জ্ঞানেন্দ্রীয়ের বৈজ্ঞানিক কৌশলসমূহ প্রয়োগের ফলাফল যা যুক্তি, স্বাভাবিক যোগাযোগ এবং সমস্যা সমাধানের মত বিষয় যা শুধুমাত্র মনুষ্য কর্তৃক সম্পাদন করতে পারে। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধুমাত্র বিষয়গুলোকে স্মার্ট করেনা এটি বিষয়গুলোকে আরো দক্ষ এবং কার্যকর করে। অন্য কথায়, এর মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়কে আরো সঠিকভাবে কাজ করা যায়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গণতন্ত্রের উপর গভীর প্রভাব রেখে চলেছে। প্রকৃত অর্থে বিষয়টিকে এভাবে দেখানো যেতে পারে যে, গোপন ব্যালটে ভোট গ্রহন পদ্ধতি চালুর পর থেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে গণতন্ত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিম্নের তিনটি উপায়ে গণতন্ত্রে প্রভাব রেখে চলেছে -
১. এটি জনগণকে তাদের সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট হতে সহজতর করেছে। বর্তমানে বেশকিছু চ্যাটবোর্ড রয়েছে যা ট্যাক্স ফাইল করতে, বিভিন্ন সরকারি সুবিধার জন্য আবেদন করতে এবং এমনকি ভোটার রেজিস্ট্রেশন করতে সহায়তা করছে। ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সরকারের সাথে শুধুমাত্র পারস্পরিক যোগাযোগ করতে জনগণকে সহায়তা করবে।
২. এটি জনগণের জন্য তাদের সরকারকে দায়বদ্ধ করার বিষয়টি সহজতর করছে। বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কিছু শক্তিশালী টুলস রয়েছে যেগুলো সরকারী ব্যয় পর্যবেক্ষণ, দূর্ণীতির ক্ষেত্রগুলো সনাক্তকরণ এবং এমনকি নির্বাচনী ফলাফল পর্যবেক্ষণ করতে এসব এআই টুলস সহয়তা করতে পারে। ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জনগণের জন্য সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে সহজতর করবে।
৩. এটি জনগণকে গণতান্ত্রিক প্রকৃয়ায় অংশ নিতে সহজতর করছে। বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বেশকিছু শক্তিশালী টুলস রয়েছে যেগুলো জনগণকে তাদের সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল সনাক্ত করতে, ভোটকেন্দ্র খুঁজে পেতে এবং এমনকি ব্যক্তিকে নির্বাচন তথ্য স্মরণ করিয়ে দিতেও সহায়তা করতে পারে।
আগামীতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক প্রকৃয়ায় নাগরিকদের অংশগ্রহণের বিষয়টি সহজ করে দেবে। গণতন্ত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গভীরভাবে প্রভাব রেখে চলেছে। ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপক প্রভাব নিয়ে আবিভর্‚ত হবে এবং গণতন্ত্রে শুধুমাত্র এর প্রভাব বারংবার উচ্চারিত হবে।
অপর দিকে গণতন্ত্রকে ব্যাহত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভাবনা নিয়ে বর্তমান দিনগুলোতে ব্যাপক আলোচনার বিষয়টিও আমরা জানি। এমনকি বেশকিছু পর্যবেক্ষক এই সতর্কতা দিচ্ছেন যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই গণতন্ত্র পরিসমাপ্তির মত অমঙ্গল ঘটাতে পারে। যেহেতু এ বিষয়টি নিশ্চিত সত্য যে এআই গণতন্ত্রের অবমূল্যায়ন ঘটাতে ব্যবহার হতে পারে, তাই এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে এটা আমাদের মনে রাখতে হবে যে এটি একটি কর্মক্ষমতা বা টুল। এআই কোন নিজস্ব স্বয়ংক্রিয় এজেন্ট নয় যে সে তার ইচ্ছামত কাজ করবে। বরং এটি এমন একটি কর্মক্ষমতা বা টুল যা ভাল-মন্দ উভয়ের জন্যই কাজ করতে পারে। বিষয়টি নির্ভর করে কে কোন উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহার করছে। গণতন্ত্রকে অবমূল্যায়ন করতে এআই ব্যবহার করার বেশ কিছু উপায় রয়েছে। মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে অথবা সুনির্দিষ্ট কন্ঠকে দমিয়ে দিতে এআই বহুবিধ জনমতে ব্যবহৃত হতে পারে। গত ২০১৬ সালের যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ রাজনৈতিকভাবে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে প্রচারণার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। রাশিয়ান গবেষণা সংস্থার মুলার অভিযোগ অনুসারে হিলারী ক্লিন্টনের বিষয়ে অবমাননাকর যোগাযোগ ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে আফ্রিকান আমেরিকানদের মাঝে রাশিয়ান দমনমূলক ভোট প্রচারণা চালানো হয়েছিল। ব্যক্তির আচরণেকে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে ডিজাইন করা ব্যক্তিগত বার্তার সাহায্যে ব্যক্তিকে লক্ষ্য করতেও এআই ব্যবহৃত হতে পারে। আবার নির্বাচনে কারচুপি করতেও এআই ব্যবহৃত হতে পারে। ভোটদান প্রকৃয়া স্বকার্যে ব্যবহারের মাধ্যমে অথবা নির্দিষ্ট প্রার্থীর পক্ষে জনমত হেলিয়ে দেয়ার মাধ্যমেও এআই ব্যবহৃত হতে পারে। ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে অথবা জনগণ যাতে প্রার্থীদের সর্বশেষ তথ্য খুঁজে পায় অথবা অন্যান্য বিষয়ের মত ইতিবাচক উদ্দেশ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহৃত হতে পারে।
তবে এআই ভাল উদ্দেশ্যে ব্যবহার হলেও এক পক্ষের বিপরীতে অন্য পক্ষকে অন্যায়ভাবে সুবিধা দিতেও ব্যবহৃত হতে পারে। মোট কথা, এআই হচ্ছে অন্যান্য টুলের মত একটি টুল যা ভাল-মন্দ উভয় কাজেই ব্যবহৃত হতে পারে। আমাদের এআই এর সম্ভাব্য ঝুঁকি ও চ্যালেজগুলোর বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে এবং বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ নিতে হবে যেন এ বিষয়টি নিশ্চিত হয় যে এআই এমনভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে যা গণতন্তকে অবমূল্যায়নের পরিবর্তে এগিয়ে নিচ্ছে।
(ফলো ডট কম অবলম্বনে)
লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সিনিয়র সাংবাদিক
Comments