থাইল্যান্ডে বাংলাদেশসহ ২৭টি দেশের মন্ত্রী ও প্রতিনিধি পর্যায়ের জনসংখ্যা ও উন্নয়ন বিষয়ক ১৯তম আন্তর্জাতিক আন্তঃসরকার পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ থাইল্যান্ডের পাতায়া এক্সিভিশন এন্ড কনভেনশন হলে পার্টনার্স ইন পপুলেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট (পিপিডি) আয়োজিত সভায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক সভাপতিত্ব করেন। আজ ঢাকায় প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়।
সভায় জিম্বাবুয়ের উপ-রাষ্ট্রপতি ডা. সি. চিওয়েঙ্গা, ভারতের মিনিস্ট্রি অব হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ারের ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যান্ড মেন্টাল হেলথ ডিভিশনের অ্যাডভাইজার ডা. এসকে সিকদার, দ্য রয়েল থাই গভারমেন্টের মিনিস্ট্রি অব পাপলিক হেলথ’র ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ’র মহাপরিচালক ডা. সুয়ান্নাচাই, ইন্দোনেশিয়ার ন্যাশনাল পপুলেশন অ্যান্ড ফ্যামিলি প্ল্যানিং বোর্ডের চেয়ারপার্সন ডা. হ্যাসতো ওয়ার্দয়া, চীনের ভাইস চেয়ার এবং ভাইস মিনিস্টার ন্যাশনাল হেলথ কমিশন ডা. ইউ কিউজুন, ইথুপিয়ার স্টেট মিনিস্টার ডা. দেরেজে, উগান্ডার মিনিস্টার অব স্টেট ফর ফাইনান্স, প্ল্যানিং অ্যান্ড ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট এবং পিপিডির বোর্ড মেম্বার আমস লুগলুবি, ঘানার ন্যাশনাল পপুলেশন কাউন্সিল রিপাবলিক অব ঘানার এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর এবং পিপিডির বোর্ড মেম্বার ডা. লেটিসিয়া অ্যাডিলেডে অ্যাপিয়াহ, পাকিস্তানের মিনিস্ট্রি অব ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসেস, রেগুলেশন্স অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশনের মহাপরিচালক ডা. সাবিনা দুররানী, সেনেগালের মিনিস্ট্রি অব হেলথ অ্যান্ড সোসাল অ্যাকশনের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার টু দ্য মিনিস্টার ডা. গুয়ে শেখ আহমেদ টিদিয়ানে, ডিপার্টমেন্ট অব স্যোসাল ডেভেলপমেন্টের পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের চীফ ডাইরেক্টর জ্যাকুয়েস ভ্যান যুয়দামসহ ২৭টি দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সভায় পিপিডির ২৭টি দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের ও প্রতিনিধি পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ দেশের প্রজনন স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়ন, শিশুমৃত্যুর হার ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানো, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ করা, শিশু শ্রম বন্ধ করা, বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষের স্বাস্থ্যহানীসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করেন। সভায় উপস্থিত প্রতিনিধিরা এসব বিষয়ে একমত পোষণ করে বক্তব্য রাখেন। তারা তাদের নিজ নিজ দেশের স্বাস্থ্য প্রজনন সেবার উন্নয়ন চিত্র ও সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। সভায় উপস্থিত এক দেশ অন্য দেশের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করে তা নিজ দেশে কাজে লাগাবেন বলে জানান।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বাংলাদেশের মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, করোনা পরিস্থিতি, বিনামূল্যে হাসপাতাল সেবা কার্যক্রমসহ স্বাস্থ্যখাত নিয়ে সরকারের নানা উদ্যোগ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০২২ সালে বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.২২ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। শিশুমৃত্যুর হার প্রতি ১ হাজার জীবিত জন্মে ২০০৯ সালে ২৮ জন থেকে হ্রাস পেয়ে এখন ১৫ জনে নেমে এসেছে। ২০০৯ সাল থেকে বর্তমানে প্রায় ৫০ ভাগ শিশু মৃত্যুরহার কমাতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৬৪ ভাগ নারী (১৫-৪৯ বছর বয়সী) গর্ভনিরোধ পদ্ধতিসেবা সরকারিভাবে বিনামূল্যে পাচ্ছে। মাতৃমৃত্যুর হার ২০০৯ সালে প্রতি লাখে ২৫৯ জন থেকে কমিয়ে এখন ১৬৩ জন হয়েছে। শিশুদের সময় মতো ভ্যাকসিন প্রদান করে বাংলাদেশ বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্যাভী কর্তৃক ভ্যাক্সিন হিরো পুরস্কার পেয়েছেন। স্বাস্থ্য প্রজনন সেবার উন্নয়নের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে জাতিসংঘের এমডিজি পুরস্কার, ২০১১ সালে ডিজিটাল হেলথ ফর ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট নামে সাউথ-সাউথ পুরস্কারসহ নানা পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন। করোনা মোকাবিলা করে বিশ^ব্যাপী বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম স্থান এবং দক্ষিণ এশিয়ায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। এই অর্জনগুলো সম্ভব হয়েছে কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে গঠনমূলক কাজ করার মাধ্যমে।
২৭টি দেশের আন্তর্জাতিক সংগঠন পিপিডির প্রধান কার্যালয়টি বর্তমানে বাংলাদেশের রাজধানীর আগারগাঁও এ স্থায়ীভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এটি বাংলাদেশে নির্মাণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেনিয়ার নাইরোবি সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে উদ্যোগ নেন এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক পিপিডি কার্যালয়টির কার্যক্রম বাংলাদেশে শুরু করতে কার্যকর ভূমিকা রাখেন। বর্তমানে সদস্য দেশগুলোর আর্থিক অনুদানের ভিত্তিতে বাংলাদেশের আগারগাঁও কার্যালয়ে বিশ্ব প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজগুলো চলমান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পিপিডির পার্টনার কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ডা. আশরাফি আহমেদ কর্মরত রয়েছেন।
সভায় সব দেশের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে একটি ঐক্যমত্য ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরিত হয়।
Comments