যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির কারণে বড় ধাক্কা খেয়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতি। এতে চলতি বছর বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমবে। মূল্যস্ফীতি কমতেও সময় লাগবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গতকাল মঙ্গলবার রাতে তাদের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাস বা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক (এপ্রিল ২০২৫) প্রতিবেদনে এ কথাগুলো বলেছে। এতে উল্লেখ করা হয়, চলতি বছর বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ২ দশমিক ৮ শতাংশে, যা গত বছরের চেয়ে ৫ শতাংশীয় বিন্দু কম।
আইএমএফ বলছে, শুল্কের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বড় সংকটে পড়তে যাচ্ছে। ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ১ দশমিক ৮ শতাংশে, যা গত বছর ছিল ২ দশমিক ৮ শতাংশ।
আইএমএফের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ নিয়েও পূর্বাভাস তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, চলতি বছর বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি (মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি) দাঁড়াতে পারে ৩ দশমিক ৮ শতাংশে। আইএমএফ সাধারণত পঞ্জিকাবর্ষ ধরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়ে থাকে।
বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয় কিছুদিন আগে চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য সংশোধন করে ৫ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে।
বৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়ে আইএমএফের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন যৌথ সভার দ্বিতীয় দিনে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়েরে অলিভিয়ে গোউরিনচাস ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা একটি নতুন যুগে প্রবেশ করছি। কারণ, ৮০ বছর ধরে চলে আসা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নতুন রূপ নিচ্ছে। এটি যদি চলতে থাকে, তাহলে বাড়তে থাকা বাণিজ্য উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর করে দেবে।’
বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন সভা ২১ এপ্রিল শুরু হয়ে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ১৫ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধিদল এই যৌথ সভায় অংশ নিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন ২ এপ্রিল বিশ্বের ৬০টি দেশ ও অঞ্চলের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে দেশগুলোকে এই শুল্ক দিতে হবে বলে জানানো হয়। অবশ্য এ ঘোষণার পর বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানি সহজ করা এবং বাণিজ্য বাধা দূর করার অঙ্গীকার করে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেয়। তখন যুক্তরাষ্ট্র ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক রেখে বাকিটা তিন মাসের জন্য স্থগিত করে। বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা হয়েছিল ৩৭ শতাংশ শুল্ক।
চীনের ওপর শুল্ক ট্রাম্প কমাননি, বরং বাড়িয়েছেন (১৪৫%)। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে (১২৫%)। পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ বৈশ্বিক বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করা এবং মন্দা তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদেরা।
এমন পরিস্থিতিতে আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়েরে অলিভিয়ে গোউরিনচাস রয়টার্সকে বলেন, পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ আরও বাড়তে থাকলে আরও অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। এতে আর্থিক বাজারে আরও অস্থিরতা দেখা দেবে।
আইএমফের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গত জানুয়ারিতে তারা যে পূর্বাভাস দিয়েছিল, তার চেয়ে আরও ধীরগতিতে কমতে পারে মূল্যস্ফীতি। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি চলতি বছরে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। আর ২০২৬ সালে তা দাঁড়াতে পারে ৩ দশমিক ৬ শতাংশে। যুক্তরাষ্ট্রেও মূল্যস্ফীতি বাড়বে।
আইএমএফের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে চলতি বছর প্রবৃদ্ধি কম হলেও আগামী বছর (২০২৬) তা বাড়বে। বেড়ে দাঁড়াতে পারে সাড়ে ৬ শতাংশে। সংস্থাটি আরও বলছে, চলতি বছরে বাংলাদেশে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত মার্চে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
Comments