কিছুটা হঠাৎ করেই ঢাকা আসছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্যারিসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক ফোরামের সাইডলাইনে বৈঠক করেন এস জয়শঙ্কর। তখনই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লি যাবেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এবারের সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আমন্ত্রণের পাশাপাশি ভূ-রাজনৈতিক আলোচনা গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দুই মন্ত্রীর বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এবারের আলোচনাটি আনুষ্ঠানিক হবে না এবং এটি ড্রইংরুম অ্যারেঞ্জমেন্ট, অর্থাৎ সোফায় বসে বৈঠক হবে।’
কী বিষয়ে আলোচনা হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অমীমাংসিত বিষয় এবং ভবিষ্যৎ সহযোগিতা নিয়ে সবসময় আলোচনা হয়। এরমধ্যে পানি, বাণিজ্য, কানেক্টিভিটি, সীমান্ত ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য বিষয় রয়েছে।
‘এবারের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন’ জানিয়ে তিনি বলেন, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আফগানিস্তানে মানবিক বিপর্যয়, শ্রীলঙ্কায় অস্থিরতাসহ অনেক কিছু হচ্ছে—যা ভারতের মতো বড় দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিস্থিতিতে ভারত তার বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে একই ধরনের কৌশল নিয়ে আলোচনা করতেই পারে।
সফরের আমন্ত্রণ
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২১ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফর করেন। এর ফিরতি সফর হিসেবে বাংলাদেশের শীর্ষ নেতৃত্ব দিল্লি যাবেন সেটাই স্বাভাবিক। সেই সফরের আমন্ত্রণ বার্তা জয়শঙ্কর হয়তো নিয়ে আসছেন বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পানি
কুশিয়ারা নদীর পানি উত্তোলন এবং রহিমপুর খাল নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। এ বিষয়টিও এবার আলোচিত হবে।
এ বিষয়ে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, সীমান্ত লাগোয়া রহিমপুর খাল হলে বাংলাদেশের পাঁচ হাজার একর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া সম্ভব। কিন্তু প্রকল্পটি ভারতের আপত্তির কারণে আটকে আছে।
তিস্তার পানি বণ্টন, অন্যান্য আরও ৬ নদীর পানি বণ্টনের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
পাটের ওপর শুল্ক
বাংলাদেশ থেকে পাট আমদানির ওপর অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি আরোপ করেছে ভারত। এটি তুলে নেওয়ার জন্য একাধিকবার অনুরোধ করা হয়েছে।
একজন কর্মকর্তা বলেন, এটি আটকে আছে। বিষয়টি আমরা আবারও তুলবো, যাতে দ্রুত এটি প্রত্যাহার করা হয়।
বাংলাদেশের রফতানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আগের যেকোনও সময়ে থেকে বেশি।
কানেক্টিভিটি
‘ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড রোড কানেক্টিভিটি’ প্রকল্পে যুক্ত হতে চায় বাংলাদেশ। এছাড়া ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন বিভিন্ন প্রদেশের সঙ্গে কানেক্টিভিটি বাড়াতে চায় বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, কানেক্টিভিটি যত বাড়বে, দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া মানুষে মানুষে যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্যও কানেক্টিভিটি প্রয়োজন। সেটির জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
Comments