দেশে গত দুই মাসে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িত ২ হাজার ৪৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার অভিযানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করেছে। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য, তালিকাভুক্ত অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ী, অপহরণকারী, চোরাচালানকারী, প্রতারক ও দালাল চক্রের সদস্য, চাঁদাবাজ, ডাকাত ও ছিনতাইকারী রয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য তুলে ধরেন সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম। ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেস এ-তে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বিত তৎপরতায় বিভিন্ন অপরাধে জড়িত মোট ৭ হাজার ৮২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে গত দুই মাসে সেনাবাহিনীর অভিযানে ৩২০টি অবৈধ অস্ত্র ও ৫৬৪ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে। আর ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৩৭০টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৫ হাজার ৫২ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, বিগত সময়ে বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের ১৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে সেনাবাহিনী। শিল্পাঞ্চল ছাড়াও সেনাবাহিনী গত দুই মাসে ২৩২টি বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান–সংক্রান্ত ঘটনা ৩৭টি, সরকারি সংস্থা বা কার্যালয়–সংক্রান্ত ২৪টি, রাজনৈতিক কোন্দল ৭৬টি এবং অন্যান্য ৯৫টি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের সুচিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৪০ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। এর মধ্যে ৪৩ জন এখনো চিকিৎসাধীন আছেন।
সড়ক অবরোধ–সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, কোথাও সড়ক অবরোধ হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেনাবাহিনী সেখানে উপস্থিত হয়। প্যাট্রোলিং (টহল) ও দ্রুত কর্মতৎপরতার মাধ্যমে সেনাবাহিনী সড়ক মুক্ত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। গাজীপুর ও ঢাকার অন্যান্য এলাকার সড়কের অবরোধগুলো একইভাবে মুক্ত করা হচ্ছে।
দরকার অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার প্রয়োগ
এক প্রশ্নের জবাবে সেনা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কোনো অপরাধীকে গ্রেপ্তারের পর অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে দিই। পরবর্তী আইনি ও বিচার কার্যক্রম সেনাবাহিনীর দায়িত্ব বহির্ভূত। সেখানে আমাদের আসলে কিছু করার থাকে না। আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা যেখানে যতটুকু ব্যবহার করা দরকার, ততটুকুই করছি।’
অপহৃত ৫ শিক্ষার্থীর অবস্থান কিছুটা শনাক্ত
পার্বত্য চট্টগ্রামে পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণের ঘটনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, ওই শিক্ষার্থীদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে। এ ঘটনায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তাব্যবস্থা ভালো। এই পাঁচজনের ঘটনায় নিরাপত্তাব্যবস্থার অবনতি হয়নি, বরং আরও জোরালো করা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে আরাকান আর্মির তৎপরতা এবং জেলেদের অপহরণ করা নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। এর জবাবে সেনা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, নাফ নদীতে জেলেদের যে অসুবিধা হচ্ছে, তা দেখভালের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে কোস্টগার্ড ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দায়িত্বপ্রাপ্ত। তাদের কাজ চলমান আছে। অনেক জেলে বুধবার মুক্তি পেয়েছে। বাকিদের বিষয়ে আলোচনা চলমান আছে। তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে যখন ভেতরের বিষয়টি চলে আসবে, তখন সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনী এ বিষয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করবে।
কালো পতাকা থাকলেই জঙ্গি নয়
‘মার্চ ফর গাজা’সহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে আরবি লেখা কালো পতাকা দেখা যাওয়ার বিষয়ে ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করা হয়। এর জবাবে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে কালো পতাকাধারীদের সেনাবাহিনী অবরোধ (বাধা দেওয়া) করেছে। আসলে কালো পতাকাধারী হলেই সে জঙ্গি, এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি। কালো পতাকাধারী হলেই তা জঙ্গি সংগঠনের কাজ, এটা মনে করারও কোনো কারণ নেই। তবে এ বিষয়ে সেনাবাহিনী সোচ্চার আছে। গোয়েন্দা বাহিনী এ বিষয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।’
গুজবে বিচলিত নয় সেনাবাহিনী
সেনাসদরের ব্রিফিংয়ে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই মুহূর্তে সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত আছে। সরকার নির্দেশিত যেকোনো দায়িত্ব পালন করে আসছে এবং পালন করবে। সেনাবাহিনী দেশ ও জাতির জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো গুজবের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গুজব তো গুজবই। এখন এটা খুবই পরিষ্কার যে কোনটা গুজব এবং কোনটা গুজব নয়। কোনো রকম গুজবে আমরা বিচলিত নই; বরং দেশ ও জাতির জন্য আমরা একতাবদ্ধ থেকে সরকারের উদ্দেশে সব রকম কাজ করে যাব।’
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, বন্ধুপ্রতিম দেশে সেনাবাহিনীর প্রধানের সফর একটি রুটিন কাজ। এর অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সম্প্রতি রাশিয়া ও ক্রোয়েশিয়া সফর করেছেন। ওই সফরে তিনি উচ্চপদস্থ অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সামরিক কারখানা পরিদর্শন করেন। এর ফলে সামরিক সহযোগিতা বা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।
ব্রিফিংয়ে সেনাসদর জানায়, বিরাজমান পরিস্থিতিতে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জনগণের জানমাল এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা প্রদানসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
Comments