‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ অমর এই গানের রচয়িতা বরেণ্য লেখক-সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
তিনি ২০২২ সালের ১৯ মে লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সাত দশকের বেশি সময় ধরে দুই হাতে লিখে গেছেন। তার এই লেখার বেশিরভাগই ছিল রাজনৈতিক ভাষ্য।
যথাযোগ্য মর্যাদায় তাঁর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার উদ্যোগ নিয়েছে আব্দুল গাফফার চৌধুরী স্মৃতি সংসদের জাতীয় কমিটি।
কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে আজ (রোববার) বেলা ১১টায় মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর কবরে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন ও মোনাজাত, বেলা ৩টায় শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে তার জীবনভিত্তিক চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, বিকাল ৪টায় একই মিলনায়তনে আয়োজিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। এতে সমবেত কণ্ঠে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি.., পলাশী থেকে ধানমণ্ডি নাটকের খণ্ডাংশ পরিবেশনা, আলোচনা ও স্মৃতি তর্পন করা হবে।
সারাদেশে ও প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সমর্থকদের দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করার অনুরোধ জানিয়েছেন আব্দুল গাফফার চৌধুরী স্মৃতি সংসদ জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সদস্য সচিব সৈয়দ সামাদুল হক।
২০০৬ সালে বিবিসি বাংলার শ্রোতাদের বিচারে যে সর্বকালের সেরা বাংলা গান বলে যে ২০টি গানকে নির্বাচিত করেছিলেন, তার তিন নম্বরে ছিল এটি। কালজয়ী এই গান বাংলা ভাষায় তো বটেই বিশ্বের ১২টি ভাষায় এখন গাওয়া হয়। একুশের গান রচনা গাফফার চৌধুরীর জীবনের অন্যতম একটি ঘটনা।
গাফফার চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর। বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থানার উলানিয়া গ্রামে। মায়ের নাম জোহরা খাতুন। বাবা ওয়াহেদ রেজা চৌধুরী বরিশাল জেলা কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
গাফফার চৌধুরী ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে বিএ অনার্স পাস করেন।
একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তিনি ‘জয় বাংলা’, ‘যুগান্তর’ ও ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকায় কাজ করেছিলেন।
স্বাধীনতার পর, ১৯৭৪ সালের ৫ অক্টোবর স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য তিনি সপরিবারে লন্ডনে চলে যান। সেখানে ‘নতুন দিন’ নামে একটি পত্রিকা বের করেন। প্রায় ৩৫টি বই লিখেছেন তিনি।
কাজের স্বীকৃতির জন্য জীবনে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন গাফফার চৌধুরী। উল্লেখযোগ্য হল, বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৭), একুশে পদক, ইউনেস্কো সাহিত্য পুরস্কার এবং স্বাধীনতা পদক (২০০৯)।
Comments