সারা বিশ্বে ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ ৩৬১ জন সাংবাদিক কারাবন্দী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশের চারজন সাংবাদিক রয়েছেন। বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা যেন ভয় বা পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই সংবাদ প্রকাশ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে।
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সিপিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কারাবন্দী সাংবাদিকদের হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ১৯৯২ সাল থেকে সারা বিশ্বে কারাবন্দী সাংবাদিকদের তথ্য সংরক্ষণ করছে সংগঠনটি।
প্রতিবেদনে সিপিজের এশিয়া প্রকল্প সমন্বয়ক বেহ লিহ ই বলেন, এটা দুঃখজনক যে ২০২৪ সালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও পূর্ববর্তী সরকারের সমর্থক হিসেবে পরিচিত চার সাংবাদিককে আটক রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে আরও কিছু সাংবাদিককে ফৌজদারি তদন্তের মুখোমুখি করা হয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দমন–পীড়ন বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি সাংবাদিকেরা যেন ভয় বা পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই সংবাদ প্রকাশ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে হবে।
সিপিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১ ডিসেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সারা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক সাংবাদিককে কারাবন্দী করা হয়েছে। এর আগে ২০২২ সালে সর্বোচ্চ অন্তত ৩৭০ জন সাংবাদিককে কারাবন্দী করা হয়েছিল। ২০২৪ সালে সাংবাদিকদের কারাবন্দী করার দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে চীন (৫০ জন)। এর পর যথাক্রমে রয়েছে ইসরায়েল (৪৩ জন), মিয়ানমার (৩৫ জন), বেলারুশ (৩১ জন) ও রাশিয়া (৩০ জন)। এ ছাড়া ভারতে আটক রয়েছেন তিনজন সাংবাদিক।
সিপিজের হিসাবে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ১১১ জন সাংবাদিক কারাবন্দী রয়েছেন এশিয়া মহাদেশে। আনুপাতিক হিসাবে তা ৩০ শতাংশের বেশি। আর মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলে কারাবন্দী রয়েছেন ১০৮ জন সাংবাদিক। তাঁদের প্রায় অর্ধেকই ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী। এর আগে কোনো অভিযোগ ছাড়া দীর্ঘ সময় ইসরায়েলের কারাগারে সাংবাদিকদের বন্দী থাকার ঘটনা তদন্ত, তাঁদের অধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা এবং নির্বিচার আটক করা সাংবাদিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছিল সিপিজে।
কারাবন্দী সাংবাদিকদের সংখ্যাটা সবার জন্য একটি সতর্কবার্তা বলে উল্লেখ করেছেন সিপিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জোডি গিনসবার্গ। তিনি বলেন, তথ্য আদান-প্রদানের স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা, চলাচলের স্বাধীনতা এবং প্রতিবাদের স্বাধীনতার মতো নানা স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ বৃদ্ধির আগে প্রায় সব সময় সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ বৃদ্ধি পায়। রাজনৈতিক দুর্নীতি, পরিবেশের ক্ষতি, আর্থিক অনিয়মসহ প্রতিদিনের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সামনে আনার জন্য এই সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার ও সাজা দেওয়া হচ্ছে।
Comments