আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পাওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে। যা দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে বলে মনে করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ডিসিসিআই।
এতে বলা হয়েছে, আইএমএফ গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ সুবিধা অনুমোদন করেছে। ‘এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ)’, ‘এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ)’ এবং ‘রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ)’-এর আওতায় এই ঋণ সুবিধা অনুমোদন করা হয়েছে। এই ঋণ ৪২ মাসে বিতরণ করা হবে।
এই ঋণ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি কমাতে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে আশা করছে ডিসিসিআই।
ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, আইএমএফের পক্ষ থেকে ঋণ পাওয়ার অনুমোদন বাংলাদেশের ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার বর্হিপ্রকাশ।
তিনি বলেন, আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক ও পলিসি সংষ্কারের শর্তারোপ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- আর্থিক খাত, নীতি কাঠামো, জ্বালানি খাত, সরকারী অর্থ ব্যবস্থা, স্থানীয় রাজস্ব বৃদ্ধি, জলবায়ু স্থিতিশীল করতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ইত্যাদি।
তিনি আইএমএফের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এই ঋণ সুবিধা বাংলাদেশকে বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়তা করবে।
ডিসিসিআই সভাপতি মনে করেন, এই ঋণ পাওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে, যা আমাদের অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে। এমনকি সরকার আমদানির ক্ষেত্রে এলসি (ঋণপত্র) খোলার কঠোর শর্তাবলী প্রত্যাহারের বিষয়ে বিবেচনা করার সুযোগ পাবে। আসন্ন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনা করে ঋণটি অবশ্যই ব্যবসায়িকদের জন্য স্বস্তি দেবে।
সরকার ইতিমধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার অনুমোদন এবং বাস্তবায়ন করেছে বলে বিশ্বাস করে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি।
উদাহরণস্বরূপ ব্যারিস্টার সাত্তার বলেন, আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে কিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত সাম্প্রতিক মুদ্রানীতিতে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সুশাসন নিশ্চিত করার প্রতি গুরুত্বারোপ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঋণের সুদ হারের সীমা শিথিল করা হয়েছে এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা আনয়নে ক্রমান্বয়ে বাজার-ভিত্তিক এবং একক বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার চালু করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি নতুন আয়কর আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে যার অন্যতম লক্ষ্য হলো দেশীয় রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানো। পাশাপাশি নতুন আয়কর আইন অটোমেশনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে, ফলে বিদেশি বিনিয়াগ আকৃষ্ট হবে।
ব্যারিস্টার সাত্তার বলেন, সরকার অদূর ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাজেট-ঘাটতি হ্রাস এবং কর-জিডিপি বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে অন্যান্য আরও সংস্কার সরকারের বিবেচনাধীন আছে।
সরকার সকল খাতে সুশাসন নিশ্চিত করবে এবং তা বজায় রাখবে আশা প্রকাশ করেছেন ব্যারিস্টার সাত্তার। তিনি সরকারকে এই ঋণের যে কোনো শর্ত সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বানও জানান, যাতে বাংলাদেশ আইএমএফের নির্ধারিত শর্তগুলো প্রতিপালনে এগিয়ে থাকতে পারে।
Comments