চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে এমন পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশের উন্নয়নবিষয়ক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য দিয়েছে তারা। যদিও সরকার চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংক বলেছে, পরের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। বিশ্বব্যাংক মনে করছে, মূল্যস্ফীতির চাপ কমে এলে মধ্য মেয়াদে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস প্রতিবেদনেও বিশ্বব্যাংক একই পূর্বাভাস দিয়েছিল—২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ দশমিক ২ আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। জুনে পূর্বাভাস দিয়েছিল ৬ দশমিক ৭ শতাংশের। অর্থাৎ সেই তুলনায় বিশ্বব্যাংক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে।
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আর্থিক খাতে নানা ধরনের কড়াকড়ি ও আমদানি নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার চলতি অর্থবছরে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসবে। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তা তো আছেই। দাতা সংস্থাটির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উচ্চ দ্রব্যমূল্যের কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে লেনদেনের ভারসাম্য বা ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২০ কোটি ডলার, আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৫৩০ কোটি ডলার। অর্থাৎ বিদেশি মুদ্রার মজুদে চাপ বাড়ছে।
ডলারের একাধিক বিনিময় হারের কারণে ব্যালান্স অব পেমেন্টে চাপ বাড়ছে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। তাদের ভাষ্য, এতে রপ্তানি নিরুৎসাহিত হচ্ছে এবং প্রবাসী আয় কমছে। বাজারভিত্তিক একক বিনিময় হার নির্ধারণ করা হলে বহির্বাণিজ্যে ভারসাম্য আসবে। বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটান অঞ্চলের প্রধান আবদুল্লায়ে সেক বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রভাব ফেলেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ক্রমবর্ধমান সুদহার ও গতি হারানো বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির আঁচ বাংলাদেশের গায়েও লাগবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংস্কারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির গতি ধরে রাখা বা ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়াসে বিশ্বব্যাংক পাশে থাকবে। যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে তার শিরোনাম হচ্ছে, স্ট্রং স্ট্রাকচারাল রিফর্মস ক্যান হেল্প বাংলাদেশ সাসটেইন গ্রোথ বা শক্তিশালী কাঠামোগত সংস্কার বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সহায়তা করতে পারে। বিশ্বব্যাংক বলছে, কাঠামোগত সংস্কার, যেমন বাণিজ্য সংস্কার ও রপ্তানি বহুমুখীকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে। প্রবৃদ্ধির গতি ধরে রাখার ক্ষেত্রেও তা সহায়ক।
Comments