বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চালু হলো ‘ইনক্লুসিভ সার্ভিসেস অ্যান্ড অপরচুনিটিস ফর হোস্ট কমিউনিটি অ্যান্ড ডিসপ্লেসড রোহিঙ্গা পপুলেশন (আইএসও)’ এবং ‘হোস্ট অ্যান্ড রোহিঙ্গা এনহ্যান্সমেন্ট অব লাইভস (হেল্প)’ প্রকল্প। ৭০ কোটি ডলারের এই প্রকল্প দুটি মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার।
এ উপলক্ষে আজ রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে যৌথভাবে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংক। এতে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদের আশপাশে বসবাস করা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মৌলিক সেবা ও সুযোগ নিশ্চিতে পূর্বের অভিজ্ঞতা, বর্তমান চ্যালেঞ্জ, সমাধান এবং লক্ষ্য নিয়ে বক্তারা আলোচনা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে অনেক প্রকল্পই দেশে চালু আছে। প্রতিবছর দুই–তিন শ কোটি ডলারের সহায়তার ব্যাপারে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সবগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে জটিল প্রকল্প ছিল। কিন্তু আজকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অর্থই হলো সব চ্যালেঞ্জ ইতিমধ্যে মোকাবিলা করা হয়েছে। প্রকল্পগুলো সম্পন্ন করা এবং উদ্দেশ্য অর্জন করা এখন নতুন চ্যালেঞ্জ।
১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের নতুন ডিভিশন ডিরেক্টর জ্যঁ পেম। তিনি বলেন, এই দীর্ঘ আট বছরের সংকটে রোহিঙ্গা জনগণ যেমন সহনশীলতা দেখিয়েছে, তেমনি স্থানীয় জনগণও অসাধারণ সহনশীলতা প্রদর্শন করেছে। তবে এই সংকট সেবা, অবকাঠামো এবং সামাজিক জীবনে বড় চাপ সৃষ্টি করেছে। এতে বিশ্বব্যাংক শুরু থেকেই বাংলাদেশের পাশে আছে।
স্বল্পমেয়াদি জরুরি সহায়তার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন নিশ্চিত করাই বিশ্বব্যাংকের লক্ষ্য জানিয়ে জ্যঁ পেম বলেন, এই প্রচেষ্টায় সরকারের নেতৃত্ব, জাতিসংঘ সংস্থা, এনজিও এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের ঘনিষ্ঠ সমন্বয় অপরিহার্য। জাতীয় ও স্থানীয় কাঠামোর সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে বিশ্বব্যাংক কাজ করছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, তাঁরা অনেক দিন ধরে এ দুটি প্রকল্প এবং স্বাস্থ্য প্রকল্পের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কারণ, গত বছর থেকেই অর্থসংকট দেখা দিয়েছে। সামনে কী হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাংকের এই প্রকল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানছবি: প্রথম আলো
প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অপারেশনস ম্যানেজার গেইল মার্টিন বলেন, প্রকল্পগুলো সময়মতো সম্পন্ন না হলে অর্থের যথাযথ ব্যবহার হবে না। তখন ব্যয় বাড়বে এবং সম্প্রসারণের প্রয়োজন হতে পারে। তাই প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন নিশ্চিতে জোর দিতে হবে। বিশেষ করে, স্থানীয় লোকজন ও রোহিঙ্গাদের জন্য সম্পদ ব্যবহার সর্বোত্তমভাবে করতে হবে।
এ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকল্প পরিচালক জাবেদ করিম, জ্যেষ্ঠ সমাজ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ সাবাহ মঈন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব মো. আশফাকুল আমিন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ নাজমুল আবেদীন, বন বিভাগের প্রকল্প পরিচালক মো. জগলুল হোসেন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত বছরের মে মাসে ‘ইনক্লুসিভ সার্ভিসেস অ্যান্ড অপরচুনিটিস ফর হোস্ট কমিউনিটি অ্যান্ড ডিসপ্লেসড রোহিঙ্গা পপুলেশন (আইএসও)’ এবং ‘হোস্ট অ্যান্ড রোহিঙ্গা এনহ্যান্সমেন্ট অব লাইভস (হেল্প)’ নামের প্রকল্প দুটি সরকারিভাবে পাস হয়। ৩৫ কোটি করে দুটি প্রকল্পে মোট ৭০ কোটি ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয় বিশ্বব্যাংক।
প্রকল্প দুটি শেষ করার সম্ভাব্য তারিখ ২০২৮ সালের ৩০ জুন। বাস্তবায়নে কাজ করবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, পরিবেশ বিভাগসহ বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান।
Comments