ওয়াশিংটন ডিসিতে ৫২তম স্বাধীনতা, বাংলাদেশের জাতীয় দিবস এবং বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি পালন করা হয়েছে।
এ উপলক্ষ্যে গত সোমবার সন্ধায় ওয়াশিংটন ডিসিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়াম এক সংবর্ধণা ও সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।
সংবর্ধনায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন প্রধান অতিথি এবং যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) -এর ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অ্যাম্বাসেডর ইসোবেল কোলম্যান সন্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহিদুল ইসলাম।
এর আগে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের এক ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল হানিফ, এমপি এবং সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নাহিম রাজ্জাক বিশেষ অতিথি হিসেবে এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন তার বক্তৃতায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অংশীদারিত্ব এবং ঐতিহাসিকভাবে উভয় দেশের জনগণ গণতন্ত্র এবং মানুষের মর্যাদা, আর্থসামাজিক উন্নয়নের আকাঙ্খা এবং বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি আনুগত্য তুলে ধরার বিষয়ে একই মূল্যবোধ বিনিময়কে তুলে ধরে গভীরভাবে মূল্য দেয়ার বিষয় পুন:নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি শক্তিশালী, অধিকতর টেকসই এবং সমৃদ্ধ সম্পর্ক গড়ে তুলতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
ড. আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বর্তমানে শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে এবং বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার ব্যবসা-বাণিজ্য দৃঢ়ভাবে লালনপালন করে থাকে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আন্তরিকভাবেই বিশ্বাস করে যে আগামী দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো সমৃদ্ধি লাভ করবে যা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।"আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই বন্ধন আগামী ৫০ বছর অব্যাহত থাকবে," - তিনি যোগ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোভিড১৯ অতিমারীর সময়ে বাংলাদেশকে সহায়তা প্রদান এবং রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে অব্যাহত অঙ্গীকার করার প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তবে তিনি এও বলেন যে রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র আরো বেশী কিছু করতে পারে।
ভিডিও বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন:"বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার পাঁচ দশকের কূটনৈতিক সম্পর্ক উদযাপনে যোগদান করে আমি আনন্দিত।"
অ্যান্টনী ব্লিংকেন বলেন, ১৯৭২ সালের ৪ঠা এপ্রিল প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন উভয় দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে লেখা একটি চিঠি লিখেন। ঐ চিঠিতে তিনি আগামী বছরগুলোতে উভয় দেশের জনগণের মধ্যকার বন্ধন ও শুভেচ্ছা বৃদ্ধির প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন। আর আজ পঞ্চাশ বছর পর উভয় দেশের জনগণ নিজেদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে পারস্পরিক ভার্চুয়ালি সহায়তা করে। সেইসাথে বাংলাদেশ ও আমেরিকার জনগনের মধ্যকার বন্ধন আরো গভীরতর হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ইউএসএআইডি ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ইসোবেল কোলম্যান তার বক্তব্যে বাংলাদেশের ব্যাপক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উচ্চ প্রশংসা করে বলেন দেশটির জনগণ এ বিষয়টি বুঝতে পেরেছে যে তারা আগামীর মাইলফলকে পৌঁছুতে সক্ষম। তিনি সহসাই বাংলাদেশ ভ্রমনের আশাও ব্যক্ত করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহিদুল ইসলাম বলেন, ১৯৭২ সালের ৪ঠা এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। আর সেটিই ছিল দৃঢ় অংশীদারিত্বের শুরু যা বিগত ৫০ বছরে সম্প্রসারিত ও গভীরতর হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের উভয় দেশের সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করতে এবং অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে পারস্পরিক লাভজনক বিভিন্ন কর্মসৃচি, কর্মকান্ড এবং উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সকল দ্বিপাক্ষিক সংলাপের ফোরামগুলোকে পূনরায় সক্রিয়ও করা হয়েছে।
অনুষ্যুঠানে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায়ান অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি অ্যাম্বাসেডর কেলি কেইডারলিং, ইউএসএআইডি'র ডেপুটি অ্যাসিস্টেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মিজ অঞ্জলী করসহ বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
Comments