রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ভারসাম্যমূলক পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। একদিকে ২ মার্চ জাতিসংঘে ‘ইউক্রেনে আগ্রাসন’ সংক্রান্ত রেজুলেশনে ভোট দেয়নি ঢাকা। অন্যদিকে ২৪ মার্চ ‘ইউক্রেনে আগ্রাসনের মানবিক পরিণতি’সংক্রান্ত রেজুলেশনের পক্ষে ভোট দিয়ে উভয়পক্ষের সঙ্গেই ভারসাম্যমূলক নীতি বজায় রাখছে ঢাকা।
এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, পররাষ্ট্রনীতি সবসময় গতিশীল। পরিবর্তিত পরিস্থিতি, বিভিন্ন পক্ষের অবস্থা এবং সময়ের সঙ্গে ওই নীতি পর্যালোচনা করার সুযোগ থাকে।
তিনি বলেন, ২ মার্চে ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে পর্যালোচনা করা হয়েছে। সে কারণে বাংলাদেশের নীতির সঙ্গে ২৪ মার্চের রেজুলেশনের মিল থাকায় ভারসাম্যমূলক অবস্থান নেওয়া হয়েছে। উভয় রেজুলেশনে ভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রাশিয়া বা পশ্চিমা বিশ্বের বিক্ষুব্ধ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। তবে সরকারের উচিৎ হবে বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা।
উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ বাংলাদেশে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ম্যানটিটস্কি এক সংবাদ সম্মেলনে ২ মার্চ জাতিসংঘ রেজুলেশনে ভোটদানে বিরত থাকার জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
গত ২ মার্চের ‘ইউক্রেনে আগ্রাসন’ রেজুলেশন নিয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ওই রেজুলেশনের বাক্যগুলো অনেক বেশি শক্ত ছিল। এটি পুরোপুরি রাজনৈতিক ছিল। হয়তো সে কারণে বাংলাদেশ ভোটদানে বিরত ছিল। কিন্তু ২৪ মার্চের রেজুলেশনে মানবিক বিপর্যয়ের উল্লেখ থাকার পাশাপাশি কী কারণে এটির উদ্ভব হয়েছে সেটি সম্পর্কে বলা হয়েছে। অর্থাৎ পরের রেজুলেশনে মানবিক এবং রাজনৈতিক উভয় উপাদানই আছে বলে তিনি জানান।
রেজুলেশনগুলোতে কী আছে
ইউক্রেনে আগ্রাসন সংক্রান্ত রেজুলেশনের মূল বিষয়বস্তু ছিল ইউক্রেন আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে তীব্র নিন্দা জানানো এবং অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করে রাশিয়ান সেনাদের নিজদেশে ফেরত যাওয়া আহ্বান। একইসঙ্গে সব ধরনের আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম নিন্দা জানানো হয়। রাশিয়াকে জাতিসংঘ চার্টার মেনে চলার আহবান জানানো হয়। এই রেজুলেশনে ১৪১ দেশ পক্ষে, ৩৫টি ভোটদানে বিরত এবং ৫টি দেশ বিপক্ষে ভোট দেয়।
অন্যদিকে ইউক্রেনে আগ্রাসনের মানবিক পরিণতি সংক্রান্ত রেজুলেশনে সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রদানকারী, নারী ও শিশু, এবং সাংবাদিকসহ সব বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। হাসপাতাল, মেডিক্যাল সেন্টার, স্বাস্থ্যকর্মী এবং চিকিৎসা খাতে মানবিক সহায়তা প্রদানকারী ব্যক্তিদের সুরক্ষা দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। বিদেশি ছাত্র ও নাগরিকসহ যেসব ব্যক্তি ইউক্রেন ত্যাগ করছে তাদের কোনও ধরনের বৈষম্য ছাড়া সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে কেন এই মানবিক বিপর্যয় হয়েছে অর্থাৎ রাজনৈতিক বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের নীতি
এই যুদ্ধে একজন বাংলাদেশি মারা গেছেন। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসার সময় বৈষম্যের শিকারের অভিযোগ রয়েছে। শহীদুল হক বলেন, নতুন রেজুলেশনে বিদেশি শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের কোনও বৈষম্য ছাড়াই সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে, যা বাংলাদেশ নিজেও চায়। ফলে এর পক্ষে ভোট দেওয়া বাংলাদেশের জন্য অনেক সহজ ছিল।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেল, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের একটি জনগোষ্ঠী মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। এখানে বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয় বলে তিনি জানান।
সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মানবিক বিপর্যয় শুধু রাশিয়া বা ইউক্রেনে হবে না। এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে। এ কারণে রেজুলেশনের পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ।
Comments