
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার হঠাৎ অবনতি হয়েছে। রোববার দিবাগত রাতে ভোরের দিকে তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয় বলে জানা গেছে। সেখানে চিকিৎসকেরা খালেদা জিয়াকে ভেন্টিলেশনে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
সোমবার সন্ধ্যায় এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন, এমন একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁর অবস্থা সংকটজনক। তবে তিনি ভেন্টিলেশনে আছেন। লাইফ সাপোর্টে আছেন, এটা ঠিক নয়।’
এর আগে সোমবার বেলা পৌনে দুইটার দিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়া ‘খুব ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে’ চলে গেছেন। গত রোববার রাত থেকে তিনি এ অবস্থায় গেছেন বলে আহমেদ আজম জানান।
আহমেদ আজম খান এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়েছিলেন, তবে দেখার সুযোগ পাননি। বাইরে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমানে খালেদা জিয়া ভেন্টিলেশন সাপোর্টে আছেন। সিসিইউ থেকে আইসিইউ, এরপরে ভেন্টিলেশন বা লাইফ সাপোর্ট, যা-ই বলেন। আমি এগুলোর বাইরে বলব যে ম্যাডাম খুব ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে আছেন। ফাইট করছেন আমাদের মাঝে ফিরে আসার জন্য। বলার মতো কোনো কন্ডিশনে এখনো তিনি আসেননি।’
গুরুতর অসুস্থ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত বুধবার থেকে প্রায় সাড়াহীন ছিলেন। তিন দিন পর গত শনিবার তিনি সামান্য কথা বলেন। তবে সেদিনও সামগ্রিক সংকট কাটেনি। সেদিন চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ ছিল, আগামী কয়েকটি দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিডনি কার্যক্ষমতায় স্থিতিশীলতা ছাড়া তাঁর সামগ্রিক শারীরিক অবস্থায় স্থায়ী উন্নতি আসা কঠিন।
চীনা চিকিৎসক দল
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সহায়তায় চীন থেকে আসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল এভারকেয়ার হাসপাতালে গেছে। তারা সন্ধ্যা সাতটার দিকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে মিলিত হয়।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক আল মামুন সাংবাদিকদের বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সহায়তার জন্য চীনের পাঁচ সদস্যের একটি চিকিৎসক দল এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছেছে। মূল চিকিৎসক দল মঙ্গলবার (আজ) পৌঁছাবে।
দেশের একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, আমেরিকার জনস হপকিনস হাসপাতালের চিকিৎসক এবং লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। এতে সহায়তা দিতে চীনের চিকিৎসকেরাও যুক্ত হয়েছেন।
গুরুতর অসুস্থ হয়ে গত ২৩ নভেম্বর থেকে হাসপাতালে শয্যাশায়ী খালেদা জিয়া। তাঁর লিভারজনিত সংকট, কিডনির কর্মক্ষমতা হ্রাস, শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিসসহ একাধিক শারীরিক জটিলতা একসঙ্গে দেখা দেওয়ায় তাঁর চিকিৎসা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক দিনে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে আইসিইউ সমমানের হাইডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) রাখা হয়েছিল। রোববার ভোরে এইচডিইউ থেকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র আইসিইউতে নেওয়া হয়।
বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত খবর নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতারা। এ পরিস্থিতিতে দলটি খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সংবাদ তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেনের বক্তব্য ছাড়া অন্য কোনো সূত্র বা কারও বক্তব্য ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছে।
সোমবার বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমে এ তথ্য পাঠান।
বিকেলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল, চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে ম্যাডামকে নিয়ে সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে, এটা সঠিক নয়। কেউ এতে, বিভ্রান্ত হবেন না।’
খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা এবং দীর্ঘায়ু কামনায় সোমবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের আয়োজনে দোয়া ও বিশেষ মোনাজাত হয়েছে। রোগ মুক্তি কামনায় ছাদকায়ে জারিয়া হিসেবে কেউ কেউ পশু জবাই করে গরিব দুস্থদের মধ্যে দান করেন।
দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে দলের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব ইসলামের বাসভবনে এক দোয়ার অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সিসিইউতে আগের মতোই বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। তিনি কারও বক্তব্যে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
Comments