গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের দল গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসঙ্গে সতর্ক করে তিনি বলেছেন, সরকারে থেকে দল গঠন করলে দেশের মানুষ সেটা মেনে নেবে না।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় পশ্চিম থানার খেলার মাঠে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল ও দরিদ্রদের শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ছাত্ররা দল গঠন করতে চায়, আমাদের এতটুকু আপত্তি নেই। আমরা আনন্দিত। ছাত্ররা রাজনীতি করবে, আসবে, নতুন দল গঠন করবে, আমরা তাদের স্বাগত জানাব। তারা তাদের নতুন চিন্তাভাবনা দিয়ে মানুষের মনের মধ্যে যাওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু সরকারে থেকে যদি দল গঠন করেন, এ দেশের মানুষ সেটা মেনে নেবে না। দল করবেন, দল করেন, স্বাগত জানাব, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করে যাব। অযথা সংঘাতমূলক কথাবার্তা রাজনীতির মধ্যে না আনাই ভালো।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকবেন। নির্বাচন অবশ্যই এ দেশে হবে। নির্বাচন হতে হবে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। আমরা চাইব অন্তর্বর্তী সরকার সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে এই নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইউনুস সরকারকে অনুরোধ করেছি, যত দ্রুত সম্ভব ন্যূনতম সংস্কার যেটা প্রয়োজন অর্থাৎ মানুষ যেন ভোট দিতে পারে, বিচারটা যেন সঠিক পায়, প্রশাসন যেন পক্ষপাতিত্ব না করে—এ বিষয়গুলো দেখে ভোটের আয়োজন করেন। মানুষ যাতে ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে।’
রাজধানীর উত্তরা এলাকায় আজ শনিবার বিকেলে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল ও দরিদ্রদের শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন বহু মানুষছবি: সংগৃহীত
অনুষ্ঠানে বক্তব্যে নিরাপত্তা হেফাজতে থাকাকালে কুমিল্লায় যুবদল নেতা নিহত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যের কথা, গত শুক্রবার কুমিল্লায় আমাদের যুবদলের এক নেতাকে যৌথ বাহিনী তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। পরিষ্কার করে বলতে চাই, এ ধরনের ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আর দেখতে চাই না।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা আর গুম হতে দেখতে চাই না। ইলিয়াস আলী, মুন্নাদের গুম করা হয়েছিল। তাদের চিহ্ন পর্যন্ত খুঁজে পাইনি। এটা আমরা আর দেখতে চাই না। দেশে শান্তিপূর্ণ অবস্থা দেখতে চাই। আইনের শাসন দেখতে চাই। ন্যায়বিচার দেখতে চাই। আর মানুষের ওপর অত্যাচার করা দেখতে চাই না।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা জনগণের ক্ষোভের কারণে পালিয়ে গেছে। অথচ কিছুদিন আগে বলেছে, হাসিনা দেশ ছেড়ে পালায় না। আজকে পালিয়ে গেছে। পালিয়ে যাওয়ার পরও তার দুষ্টামি, মানুষের ক্ষতি করার অভ্যাস যায়নি। দিল্লিতে বসে ষড়যন্ত্র করছে, চক্রান্ত করছে। বলছে, তোমরা সবাই তৈরি হও আমরা টুক করে চলে আসব।
শেখ হাসিনার প্রতি ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কত মায়ের বুক খালি করেছে। কত সন্তান তার পিতাকে হারিয়েছে, মানুষ ভুলবে না। এতগুলো মানুষ মারল, তার মধ্যে একটুও অনুশোচনা নেই। একবারের জন্যও বলেনি আমি ভুল করেছি। তিনি বলেন, আজকে হাসিনামুক্ত হয়েছি। কিন্তু যে লক্ষ্য, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া, এখন পর্যন্ত গণতন্ত্রে ফিরে যেতে পারিনি।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আফাজ উদ্দিনের সার্বিক সহযোগিতা ও সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, সদস্যসচিব মোস্তফা জামান। অনুষ্ঠান শেষে দরিদ্র মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র ও শাড়ি বিতরণ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
Comments