নেত্রকোনার ১০ উপজেলার মধ্যে চারটি বড় হাওরাঞ্চল। এই তিন উপজেলা হলো মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী, মদন ও কলমাকান্দা। তাছাড়া কেন্দুয়া ও আটপাড়া উপজেলাতে ছোট হাওরে বোরো আবাদ হয় । এ চারটি হাওরে বর্তমানে পুরোদমে চলছে বছরের প্রধান ফসল বোরো ধানের আবাদ। প্রতিদিনই শীত উপেক্ষা করে বোরো আবাদে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক।
জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানায়, এ বছর জেলার মোহনগঞ্জ হাওরে ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর মধ্যে পুরো আবাদ সম্পন্ন, খালিয়াজুরীতে ২০ হাজার হেক্টরের মধ্যে ১৯০০০ হেক্টর সম্পন্ন, মদন উপজেলায় ১৮ হাজার ৫০০ হেক্টর মধ্যে ৮৫০০ হেক্টর সম্পন্ন হয়েছে। হাওরে প্রায় ৯৮% সম্পন্ন হয়েছে। সর্বমোট ৪৫% বোরো আবাদ অর্জন হয়েছে।
এদিকে, ২০২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বরের থেকে হাওরাঞ্চলে শুরু হয়েছে বোরো আবাদ। হাওরে বেরো আবাদ চলবে জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত। আর টানের জমি বোরো আবাদ শেষ হবে ফেরুয়ারি মাসের ১০-১৫ তারিখের মধ্যে।
মদন উপজেলার হাওর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা বীজতলা থেকে বোরো চারা উত্তোলন করে বস্তায় ভরে ফসলের মাঠে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার চারা রোপণের জন্য মই দিয়ে জমির উঁচু নিচু সমান করছেন। অনেকে জমিতে চারা রোপণের জন্য হাল চাষ দিয়ে প্রস্তুত করছেন। ফসলি এসব জমিতে গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে পানি। কোথাও একা আবার কোথাও দলবদ্ধ হয়ে কৃষকদেরকে জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করতে দেখা গেছে।
মোহনগঞ্জ উপজেলার কামালপুর গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, হাওরে বোরো আবাদ শেষ হয়েছে । তবে সবরকম কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির কারণে গত বছরের তুলনায় এবার চাষাবাদ ব্যয় অনেকটা বাড়ছে।
খালিয়াজুরী উপজেলার পুরানহাটি গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে পুরোদমে বোরো আবাদ শেষের দিকে। এখানকার বোরো ফসল নির্ভর করে ফসল রক্ষা বাঁধগুলোর ওপর। বাঁধগুলোর সংস্কার কাজ সময়মতো সম্পন্ন হলে আগাম বন্যার কবল থেকে কৃষকদের হাজার হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান রক্ষা করা সম্ভব। নাহলে আগাম বন্যা দেখা দিলে ফসলহানির আশঙ্কা থাকে।
মদন উপজেলার ফতেপুর গ্রামের কৃষক রহমত মিয়া বলেন, প্রতি বছর ফসল উৎপাদনের সময় ধানের দাম কমে যায়। এতে উৎপাদন খরচ ওঠাতেই হিমশিম খেতে হয়। ফলে ঋণের বোঝা বাড়ে। এখন আবার শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। গত বছর যেখানে ছিল কাটা প্রতি ধান লাগানো ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বর্তমানে দিতে হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এরপরও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বলেন, জেলার ১০টি উপজেলায় এ বছর এক লাখ ৮৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি জানান, এ বছর হাওরে বি-২৮ এর পরির্বতে ৮৭, ৮৮,৮৯, ৯২, ৯৬, ১০২ বেশি আবাদ হচ্ছে। জেলার কৃষককে সরকারি প্রণোদনা সার, বীজ দেওয়া হয়েছে। এ বছর বোরো আবাদে কৃষকদের তেমন কোনও সমস্যা হচ্ছে না এবং সাময়িক শ্রমিক সংকটের বিষয়টা তেমন প্রভাব ফেলবে না।
Comments