ডলারের ওপর চাপ কমাতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের অংশবিশেষের লেনদেন নিজ নিজ মুদ্রা ব্যবহারের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। অর্থাৎ কোনও ধরনের তৃতীয় মুদ্রার অন্তর্ভুক্তি ছাড়াই সরাসরি টাকা-রুপিতে লেনদেন করার বিষয়ে দুই দেশ উদ্যোগ নিচ্ছে। এখন যার যার মুদ্রায় লেনদেন করতে বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক ভারতীয় স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও আইসিআইসিআই ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলবে। ভারতীয় ব্যাংক দুটিও বাংলাদেশি দুই ব্যাংকে একই ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট চলমান ডলারের সংকটের মধ্যে কয়েক মাস ধরেই টাকা ও রুপিতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের লেনদেন নিষ্পত্তির বিষয়ে কথা হচ্ছে। এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক স্টেট ব্যাংক ইন্ডিয়া (এসবিআই) সিদ্ধান্ত নিয়েছে— বাংলাদেশের সঙ্গে ডলারের পরিবর্তে রুপি ও টাকায় লেনদেন করার। বাংলাদেশ ব্যাংকও চায় ভারতের সঙ্গে টাকা ও রুপিতে লেনদেন করতে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রুপিতে সরাসরি লেনদেন করার বিষয়ে সেদেশের ব্যাংকগুলোর জন্য নির্দেশনা জারি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও বিষয়টি পর্যালোচনা করে টাকা ও রুপিতে দ্বিপাক্ষিক লেনদেন করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনও ব্যবসায়ী আমদানি বা রফতানির ক্ষেত্রে রুপিতে এলসি খুলতে চাইলে, তা করতে পারবেন।’ ব্যাংকগুলো রুপিতে এলসি করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে অনুমতি দেবে বলেও তিনি জানান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে টাকা ও রুপির লেনদেন করতে চাইলে ব্যাংকগুলোকে আমরা অনুমতি দেবো।’
এ প্রসঙ্গে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম বলেন, ‘এই মুহূর্তে ডলারের ওপর চাপ কমাতে টাকা ও রুপিতে লেনদেন করতে পারলে ভালো কাজ দেবে। টাকা ও রুপিতে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য হলে উভয় দেশই লাভবান হবে। তার মতে, পর্যায়ক্রমে দুই দেশের আরও ব্যাংক এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হবে।জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানির পরিমাণ প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ২ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ লেনদেন টাকা ও রুপিতে সম্পন্ন করবে দুই দেশ। অপরদিকে গত অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ছিল প্রায় ১৩.৬৯ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ২ বিলিয়ন ডলার টাকা-রুপিতে লেনদেন হলেও বাকিটা বরাবরের মতো মার্কিন ডলারে পরিশোধ করবে বাংলাদেশ।
প্রসঙ্গত, দুই দেশের নিজস্ব মুদ্রার মধ্যে লেনদেন প্রক্রিয়া কেমন হবে, তা নিয়ে আলোচনা করতে চলতি মাসের শুরুর দিকে ঢাকা সফর করে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার একটি প্রতিনিধি দল। তারা গত ১১ এপ্রিল বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংকে (ইবিএল) বৈঠক করে। সেখানে ইবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সফরকারীরা টাকা ও রুপিতে দুই দেশের বাণিজ্যিক লেনদেন পরিশোধ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়।
Comments