ভারত সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন দিল্লিতে তার সফরের প্রথম দিনেই আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করেছেন। যা নিয়ে কূটনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। ভারতের সাবেক কূটনীতিকদের অনেকেই মনে করছেন, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে এমন ‘কঠোর বার্তা’ দেওয়ার নজির খুব কমই আছে। তাদের কেউ কেউ এমনও মনে করছেন, বাংলাদেশ আসলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যকার কিছু কিছু ‘অপ্রিয় সত্যে’র প্রতিই দিকনির্দেশ করেছে।
দিল্লির শীর্ষস্থানীয় স্ট্র্যাটেজিক থিঙ্কট্যাঙ্ক বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনে (ভিআইএফ) বুধবার সন্ধ্যায় যেসব প্রস্তাব তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার মধ্যে রয়েছে – ক) দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ পৃথিবীর অন্য যেকোনও অঞ্চলের চেয়ে কম। এই বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য বাধা বা ব্যারিয়ারগুলো দূর করতে হবে। ‘একটা দেশ হঠাৎ করে খেয়াল-খুশি মতো আরেকটা দেশের ওপর ট্যারিফ বা নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার বসিয়ে দিয়ে বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে ব্যাহত করলো, এভাবে তো চলতে পারে না। বরং এক দেশ যাতে অন্য দেশে বিনিয়োগ করতে পারে, তার জন্য সব পারস্পরিক বিধিনিষেধ দূর করতে হবে’, বলেছেন তিনি।
খ) ‘আমাদের এই অঞ্চলের ভূগোলই আসলে এই নিয়তি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে যে প্রাকৃতিক সম্পদকে এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতে হবে–যার মধ্যে নদীর জলও আছে। এখানে একটি দেশ কিছুতেই অন্য একটি দেশকে তার ন্যায্য হিসসা থেকে বঞ্চিত করতে পারে না’, আরেকটি প্রস্তাবে বলেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
গ) কোনও দেশ যাতে তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির স্বার্থে অন্য দেশের মানুষকে চটিয়ে না ফেলে, সেদিকেও যত্নবান হওয়ার কথা বলেছেন এ কে আবদুল মোমেন। তার কথায়, ‘আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোনও দেশ তাদের ঘরোয়া রাজনীতির ইস্যুগুলো দিয়ে অন্য দেশের গরিষ্ঠ সংখ্যক মানুষের ভাবাবেগকে না আহত করে ফেলে!’ এই প্রস্তাবগুলো তুলে ধরতে গিয়ে তিনি কোনও দেশের নাম করেননি ঠিকই–কিন্তু এর মাধ্যমে তিনি যে মূলত ভারতকেই বার্তা দিতে চেয়েছেন, তা নিয়ে পর্যবেক্ষকদের কোনও সংশয় নেই।
Comments