বিশ্বব্যাংকের ঋণে এগোচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল প্রকল্প। এ প্রকল্পের ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ ও চ্যানেল ড্রেজিংয়ে চারটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- জার্মান সংস্থা সেলহর্ন, ডব্লিউএসপি, কেএস এবং অ্যাকোয়া।
এটিকে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক। শনিবার দুপুরে তিনি বলেন, ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ ও চ্যানেল ড্রেজিং কাজের জন্য চার হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। যা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক।
তিনি আরও বলেন- বিশ্বব্যাংকের একটি কারিগরি প্রতিনিধি দল ৪ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে আসছে। আশা করছি শিগগিরই আমরা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করব, যা প্রকল্প কাজে একটি বড় অগ্রগতি। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় তিনটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। একটি চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থায়নে। অন্য দুটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) আওতায় বিদেশি বিনিয়োগে বলে জানান সচিব ওমর ফারুক।
তিনি বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের (সিপিএ) অর্থায়নে টার্মিনাল নির্মাণের তত্ত্বাবধানকারী কুনহোয়া ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসাল্টিং কোম্পানি লিমিটেড এবং ডায়ানইয়াং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড ইতোমধ্যেই পরিদর্শন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আগামী ২০-২১ সেপ্টেম্বর স্টেকহোল্ডারদের একটি সভা করব। এর পরে প্রকল্পের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
আর বিদেশি বিনিয়োগে নির্মিত দুটি টার্মিনালের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়াংকে লেনদেন উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। টার্মিনাল পরিচালনার জন্য একটি ব্যবসায়িক মডেল প্রস্তুত করতে তারা ডিপি ওয়ার্ল্ড এবং পিএসএ সিঙ্গাপুরের সঙ্গে কাজ করছে।
বন্দর সচিব আরও বলেন, উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠানটি একটি ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করবে, যা বে-টার্মিনালের নির্মাণ প্রক্রিয়া, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের ভাগ এবং ইজারার সময়কালের একটি রূপরেখা দেবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে ১৮০০ কন্টেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর ৬ হাজার কন্টেইনার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজও বন্দরে ভিড়তে পারবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ৯.৫ মিটার গভীরতা এবং ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশ করতে পারে না। নতুন বে-টার্মিনালে ১২ মিটার গভীর এবং ২৬০ মিটার লম্বা জাহাজও প্রবেশ করতে পারবে। জাহাজগুলোকে আর জোয়ারের ওপর নির্ভর করে চলতে হবে না।
বে-টার্মিনাল প্রকল্পের ফোকালপার্সন চট্টগ্রাম বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাফিউল আলম জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনালটি প্রায় ২৫০০ একর জমির ওপর নির্মিত হবে, এর মধ্যে ৮৭১ একর ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং সরকারি জমি। যা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বাকি ১৬০০ একর জায়গা সমুদ্রের অভ্যন্তর থেকে সৃষ্ট। এই বে-টার্মিনাল বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য হ্যান্ডেলিং ক্ষমতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। বাড়বে আমদানি-রফতানি। সমৃদ্ধ ও গতিশীল হবে দেশের অর্থনীতি।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালে সমুদ্র উপকূলে বে-টার্মিনাল প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। সরকারি প্রকল্পের অগ্রাধিকার অনুযায়ী ২০১৯ সালের জুলাই মাসে বে-টার্মিনাল প্রকল্পটি পাবলিক প্রাইভেট-পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেন। প্রকল্পটি নিয়ে বর্তমানে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ২০২৫ সাল। এই সময়ের মধ্যেই বে-টার্মিনালে জাহাজ ভেড়াতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় একটি ধাপ পার হতে যাচ্ছে।
Comments