রাজধানীর বাজারের চিরচেনা চিত্র পাল্টে গেছে। বাজারে উঠেছে মধু মাসের নতুন কাঁচা-পাকা আমসহ বেল, তরমুজ, আনাঁরস,বরইসহ দেশী-বিদেশী ফলে ভরপুর থাকলেও দাম আকাঁশ ছোঁয়া !
বাজারে এখন আর আগের মতো তেমন ক্রেতা দেখা না গেলেও একাধিক ব্যাবসায়ি জানিয়েছেন, রমজানের আগেই অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে খেজুরসহ বিভিন্ন ফলের দাম। ফাল্গুনেই বাজারে উঠেছে মধু মাসের ফল। ফল বিক্রেতা শেখ নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রতি কেজি পাঁকাআমের দাম ৫০০ আর কাচঁআম ২০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন তিনি।
নুরুল ইসলাম বলেন, পাঁকা আম দেশে এসেছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আর কাঁচা আম এসেছে দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে। রাজধানীর কৃষি মার্কেট,টাউনহল বাজারসহ নিউ মার্কেট ঘুরে এমনটা-ই দেখা গেছে। তরমুজ আসছে দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে বেশী । প্রতি পিচ তরমুজ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৮০-১০০ টাকা করে এতে একপিচ তরমুজের দাম পড়ছে ৫০০-৩০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
বরই বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৬০ টাকায় , বেল ১০০-২০০ টাকা, আনারস ৫০-৮০ টাকা আর ডাব ৮০-১৫০ টাকায়। অন্যদিকে রোজাকে কেন্দ্র করে আরেক দফা বেড়েছে আমদানিকৃত ফলের দাম। গত দুই দিনের ব্যাবধানে সব ধরণের ফলের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০-৫০ টাকা।
রোজার পূর্বের দামের সঙ্গে রোজার শুরুতে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাকে বাজারের দেশী-বিদেশী ফল যা, সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে অনেক ফলের দাম। আর বেড়ে যাওয়া দামের পুরোটাই বহন করতে হচ্ছে ভোক্তাকেই। খুচরা ব্যাবসায়িদের দাবি পাইকারি যেভাবে কেনা খুচরা তেমনি বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে ভোক্তাদের সংগঠন ক্যাব বলছে, ফলের পাইকারি, খুচরা সব ধরনের বাজারেই মনিটরিংয়ের অভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিক্রেতারা। তারা জানিয়েছেন, আমদানিকারক পর্যায়ে মাল্টা ও কমলা ১৫ কেজির কার্টন ৪ হাজার টাকা। যা গত ১৫ দিন আগেও বিক্রি হয়েছিল ৩ হাজার ৬০০ টাকায়। এক মাস আগে মাল্টার ১৫ কেজি কার্টন বিক্রি হয় ৩ হাজার টাকায়। নাশপাতির দাম বেশী থাকলেও কমেছে আপেলের দাম।
ফল ব্যাবসায়ি তাহের আলী জানিয়েছেন, চায়না আপেল ২০ কেজি কার্টন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৩০০- ৩ হাজার ৪০০ টাকায়। তবে এক নম্বর চায়না আপেল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫০০-৪হাজার ৭০০ টাকা। একইভাবে ৯ কেজি কার্টনের নাশপতি বিক্রি হচ্ছিল ১৯০০-১৯৫০ টাকা।এক সপ্তাহ আগে এসব নাশপতির দাম ছিল ১৭০০-১৭৫০ টাকা।
এদিকে চায়না ম্যান্ডারিন ৮কেজির কার্টন বিক্রি হচ্ছে ১৫০০-১৬০০ টাকায়। তবে আঙুর ও আনার পুরোটাই পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আসে।
কার্টন প্রতি আনারের বিক্রি হচ্ছিল পাঁচ হাজার থেকে পাঁচ হাজার তিনশ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও কার্টন প্রতি এক হাজার টাকা কম ছিল। মার্চ মাসের শুরুতে এসব আনারের দাম ছিল ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। ২০-২২ কেজির আঙুরের কার্টন বিক্রি হচ্ছে ৪৪০০-৪৬০০ টাকায়। গত একস সপ্তাহ আগেও এসব আঙুরের দাম ছিল ৩৬শ টাকা থেকে ৩৮শ টাকা।
রোজাদারদের ইফতারের অন্যতম অনুসঙ্গ খেজুর। চলতি বছর নিম্নমানের খেজুরের কেজিও ৫০০ টাকা। অন্য সব ধরণের খেজুরের দামও বেড়েছে কেজিতে ২০০-৩০০ টাকা। খেজুর ব্যবসায়ীরা জানান, সকল মানের খেজুরে ২০০-৩০০ টাকা বেড়েছে।
এমনও খেজুর আছে ৫০০ টাকা বেড়েছে কেজিতে। যা গতবছর ৪০০-৫০০ টাকায় মোটামুটি ভালোমানের খেজুর পাওয়া গেছে কিন্তু এবার সেই খেজুর ৮০০-১০০০ টাকা। খেজুর ১০০০-৬০০০ দরেও বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়িরা। আপেল ছিল ১৮০-২০০ টাকা তা এখন সাড়ে ৩০০ টাকা কেজি, আঙ্গুর ২৬০-২৮০ টাকা।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, তেলের দাম কমেছে। চিনির শুল্ক সামান্যই কমানো হয়েছে। তিনি বলেন, প্রভাব বাজারে পড়ার কথা নয়। আর খেজুর নিয়ে আমরা সমস্যায় আছি।
কারণ সর্ম্পকে তিনি বলেন, শুল্ক কমানো খেজুর এখানো দেশে আসেনি। আগের আনা খেজুর তাই দাম বেশি। তবে বস্তায় আনা খেজুরের দাম আমরা কেজি ২০০ টাকার নিচে দাম ঠিক করে দিচ্ছি।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের ১২ তারিখে সরকারের পক্ষ থেকে যদিও খেজুর ও চিনির দাম নির্দিষ্ট কওে দিয়েছেন। অতি সাধারণ মানের খেজুর প্রতি কেজি ১৫০-১৬৫ টাকা এবং বহুল ব্যবহৃত জাইদি খেজুরের দাম ১৭০-১৮০ টাকা নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই খুচরা দাম নির্ধারণ করে ব্যবসায়ীদের বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
খেজুরের খুচরা মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত জারি করা এক স্মারকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে আমদানি করা বিভিন্ন মানের খেজুরের আমদানি মূল্য, আরোপিত শুল্ক, কর ও আমদানিকারকদের অন্যান্য খরচ বিশ্লেষণ করে এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বাজার ঘুরে দেখা গিয়েছে ব্যাবসায়িরা সরকারের নির্দেশ অমান্য করেই খেজুর বিক্রি করছে!
Comments