মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
Tuesday, 16 September, 2025

যুক্তরাষ্ট্র চায় না বাংলাদেশের উন্নয়ন অব্যাহত থাকুক: শেখ হাসিনা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক
  16 May 2023, 21:06

সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সফরের সময় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এই সমালোচনা করেন। সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়েও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী।

বিবিসির সাংবাদিক ইয়ালদা হাকিম জানতে চান, যুক্তরাষ্ট্র কেন বাংলাদেশের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলে তিনি মনে করেন? এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে বাহিনীর ওপর তারা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেটা তাদের পরামর্শেই ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। তাদের সব প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছিল। যেভাবে তারা বাহিনীটাকে তৈরি করেছে, তারা তো সেভাবেই কাজ করছে বলে আমার বিশ্বাস। তাহলে কেন তারা এই নিষেধাজ্ঞা দিলো? এটা আমার কাছেও বিরাট এক প্রশ্ন।’

শেখ হাসিনার কাছে বিবিসি জানতে চায়, তাহলে কেন যুক্তরাষ্ট্র এটা করেছে বলে তিনি মনে করেন? তিনি বলছেন, ‘আমি জানি না, হয়তো তারা আমার কাজ অব্যাহত থাকুক তা চায় না। আমি বাংলাদেশের জন্য যেসব উন্নতি করেছি, সেটা তারা হয়তো গ্রহণ করতে পারছে না। এটা আমার অনুভূতি। একটা পর্যায়ে সন্ত্রাস সব দেশের জন্য সমস্যা হয়ে উঠেছিল। আমাদের দেশে আমরা সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করেছি। এরপর মাত্র একটা ঘটনা ঘটেছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণ রাখতে কঠোর পরিশ্রম করেছে।’

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারির আগে বাংলাদেশে বন্দুকযুদ্ধের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন বিবিসির ইয়ালদা হাকিম। নিষেধাজ্ঞা জারির আগে ২০১৮ সালে ৪৬৬ জন মানুষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। ২০১৯ সালে ৩৮৮ জন ও ২০২০ সালে ১৮৮ জন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার পর এই সংখ্যা মাত্র ১৫ জনে নেমে এসেছে।

এর জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেসব নম্বর তারা উল্লেখ করেছে, সেগুলো তারা প্রমাণ করতে পারেনি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব হত্যাকাণ্ড আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করেনি। কারণ, আমরা প্রমাণ চেয়েছিলাম। সেগুলো তারা পাঠিয়ে দিক, আমরা তদন্ত করে দেখবো।’

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচেভেলের একটি তথ্যচিত্রে দাবি করা হয়েছে, র‌্যাবের দুই কর্মকর্তা গোপন তথ্য ফাঁস করে বলেছেন, এসব হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এসেছে। এই তথ্য তুলে ধরা হলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি না তারা কীভাবে এটা করেছে, কিন্তু আমেরিকায় কী ঘটছে, আপনি দেখতে পাচ্ছেন। সেখানে প্রায় প্রতিদিন একাধিক হত্যাকাণ্ড ঘটছে। এমনকি স্কুল, শপিং মল, রেস্তোরাঁয় হত্যাকাণ্ড ঘটছে। এমনকি স্কুল শিক্ষার্থীরা, সাধারণ মানুষ হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অথবা সশস্ত্র ব্যক্তির হাতে নিহত হচ্ছে। আমার মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তাদের নিজেদের ব্যাপারে আরও মনোযোগী হওয়া। তাদের দেশের কী অবস্থা? তাদের উচিত শিশুদের জীবন রক্ষা করা। তারা নিজেদের লোকজনের ব্যাপারে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা যেসব অভিযোগ করেছে, আমরা তাদের কাছে প্রমাণ চেয়েছিলাম। তারা দেয়নি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা একটা খেলার মতো। এটা আমার কাছে এখনও পরিষ্কার নয় কেন তারা আমাদের দেশের প্রতি নিষেধাজ্ঞা দিলো?’

শেখ হাসিনা নিজের পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, ‘এই খুনিরা দায়মুক্তি পেয়েছিল। আমি এমনকি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারিনি। আমার বিচার পাওয়ার কোনও অধিকার ছিল না। সেই সময় তারা কোনও নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। বরং একজন হত্যাকারী আমেরিকায় আশ্রয় নিয়েছে। আমরা তাদের বারবার অনুরোধ করেছি, তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য। তারা করেনি। কেন তারা শুনছে না, আমি জানি না।’

জাতীয় সংসদে গত এপ্রিলের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রী এক বক্তব্যে বলেছিলেন, আমেরিকা বাংলাদেশের ক্ষমতায় পরিবর্তন আনতে চায়। এই বক্তব্যের পক্ষে কী প্রমাণ আছে বিবিসির পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়। এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে একটা বড় প্রশ্ন হলো, কেন তারা নিষেধাজ্ঞা জারি করলো? যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের সন্ত্রাস মোকাবিলার জন্য কাজ করছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তখন তারা লঙ্ঘনকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। যারা ভুক্তভোগী, তাদের পক্ষে নয়।’

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, জাতিসংঘ, সবাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে- এই তথ্য শেখ হাসিনাকে জানানো হলে তিনি বলেন, ‘আমি জানি ১২টি প্রতিষ্ঠান মিলে এসব বক্তব্য দিয়েছে, কিন্তু তারা প্রমাণ করতে পারেনি। আমি জানি না কী আন্তর্জাতিক খেলা চলছে।’

কেন তারা আপনাকে সরাতে চাইবে? ইয়ালদা হাকিমের এই প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা আমার পিতাকে হত্যা করেছে, যারা আমার পরিবারকে হত্যা করেছে, এমনকি ১০ বছরের ভাইকে হত্যা করেছে, সেই ষড়যন্ত্রকারীরা চায় না এই পরিবারের কেউ ক্ষমতায় আসুক।’

নির্বাচন ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন ও ভোটাধিকারের জন্য আমি সারা জীবন ধরে সংগ্রাম করেছি সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে। নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার জন্য আমরাই আইন করেছি। আমরা সবসময়ই চেয়েছি যেন মুক্ত ও স্বচ্ছ নির্বাচন হয়। এখন আমাদের ভোটার লিস্ট ছবিসহ তৈরি করেছি, আমরা স্বচ্ছ ব্যালট বক্সের ব্যবস্থা করেছি।’

Comments

  • Latest
  • Popular

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে প্রস্তুত বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা

বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় ইইউ

১৪ দিনের লড়াই শেষ, স্তব্ধ হলো ফরিদা পারভীনের কণ্ঠ

নেপালের জনগণ শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে সক্ষম হবে, প্রত্যাশা বাংলাদেশের

নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ

রাষ্ট্রদূত নাজমুল হুদার সাথে বাংলাদেশ-আলজেরিয়া বিজনেস ফোরামের প্রতিনিধি দলের মতবিনিময়

রোমে বাংলাদেশ দূতাবাসে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন

ইসলামাবাদে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপন করেছে বাংলাদেশ হাইকমিশন

গার্মেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব নেপাল'এর এজিএম'য়ে যোগ দিলেন রাষ্ট্রদূত শফিকুর রহমান

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ

১০
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে প্রস্তুত বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এ উদ্যোগের
নিউইয়র্কে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে হেনস্তার চেষ্টা
নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসে ঢোকার সময় আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে
ভিসা আবেদনে জাল নথি ব্যবহারে সতর্কতা যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বাংলাদেশি আবেদনকারীদের সতর্ক করে বলেছে, ভিসা আবেদনে মিথ্যা তথ্য বা জাল নথি
যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন / বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল, তবে উদ্বেগ রয়ে গেছে
শাসনব্যবস্থায় পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়েছে। তবে কিছু বিষয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে। দেশের
Error!: SQLSTATE[42S22]: Column not found: 1054 Unknown column 'parent_cat_type' in 'field list'