মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে একটি গোলন্দাজ বাহিনী গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন তৎকালীন বাঙালি সেনারা। তারই ধারাবাহিকতায় ’৭১ এর ২২ জুলাই ৬টি কামান নিয়ে ত্রিপুরা কোনাবান অঞ্চলে গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম আর্টিলারি ইউনিট। যার নাম দেয়া হয় মুজিব ব্যাটারি। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই যুদ্ধের ময়দানে গর্জে ওঠে মুজিব ব্যাটারির কামান। বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিভিন্ন এলাকায় পিছু হটতে থাকে পাক বাহিনী। যাতে ত্বরান্বিত হয় বিজয়।
স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর মুজিব ব্যাটারি স্মরণে চট্টগ্রামে হালিশহর আর্টিলারি সেন্টার ও স্কুলে ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ব্যাটারি কমপ্লেক্স। রোববার (২১ এপ্রিল) সকালে এর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন শেষে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, আমাদের বৈদেশিক নীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’। প্রতিবেশী সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য। কিন্তু যেকোনো আগ্রাসী বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমরা সদা প্রস্তুত ও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
শেখ হাসিনা বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা সক্ষম হবো। আওয়ামী লীগ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। এজন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রত্যেক সদস্যকে হতে হবে তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন স্মার্ট।
প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থাশীল ও অনুগত থেকে কঠোর অনুশীলন, পেশাগত দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের সমন্বয়ে গৌরব সমুন্নত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আধুনিকায়নের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে অত্যাধুনিক বিমান, হেলিকপ্টার, ইউএভি, চতুর্থ প্রজন্মের ট্যাংক, আধুনিক এপিসি, ট্যাংক বিধ্বংসী মিসাইল ও অন্যান্য যুদ্ধ সরঞ্জাম।
প্রধানমন্ত্রী দেশের কল্যাণে সেনাবাহিনীর সার্বিক কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, আজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতির আস্থার প্রতীক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। কর্মনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের কারণে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও আজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রশংসিত। জাতিসংঘ মিশনে আমাদের সৈনিকদের সামর্থ্য এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সম্প্রতি অত্যাধুনিক লাইট আর্মাড ভেহিক্যাল ও মাইন রেসিস্ট্যান্ট অ্যাম্বুস প্রটেক্টেড ভেহিকেল সংযোজন করা হয়েছে।
মুজিব ব্যাটারি কমপ্লেক্সটিতে একাডেমিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নিচতলায় গড়ে তোলা হয়েছে জাদুঘর। যেখানে সংরক্ষিত আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রথম গোলন্দাজ ইউনিট, মুজিব ব্যাটারির স্মারক ও ঐতিহ্য। যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানাতে সহায়ক হবে।
Comments