আন্তঃসংযুক্ত এই বিশ্বে সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রসমূহের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তবে দুর্ভাগ্যবশত এটি সবসময় সম্ভব নয়। নিরাপদ যোগাযোগ আর সাইবার আক্রমণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বজায় রাখার প্রয়োজনে কতিপয় রাষ্ট্র সাইবার কূটনীতি অবলম্বন শুরু করেছে।
সাইবার কূটনীতি হচ্ছে কোন রাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতির লক্ষ্যগুলোকে এগিয়ে নিতে ডিজিটাল সরঞ্জামাদির ব্যবহার। অন্য রাষ্ট্রসমূহের সাথে জড়িত হয়ে সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহার করে সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি অথবা সাইবার আক্রমণ চালিয়ে এটা করা যেতে পারে। যেহেতু বিষয়টি তুলনামূলকভাবে নতুন তাই ইতোমধ্যেই তা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রভাব রেখেছে।
সাইবার কূটনীতি দু'দিকে ধারালো তলোয়ারের মত। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে - বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা এবং বোঝাপড়া বাড়িয়ে তুলতে সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এই সামাজিক গণমাধ্যম প্রচার-প্রচারণা এবং গুজব ছড়াতেও ব্যবহৃত হতে পারে। বুদ্ধিমত্তা বা তথ্য সংগ্রহের কাজে সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি ব্যবহৃত হতে পারে। আবার এই সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি বাণিজ্য গোপনীয়তা চুরি করার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হতে পারে। সাইবার আক্রমণ শত্রুর সিস্টেম ব্যহত এবং একই রকমের ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
বর্তমান বিশ্বে সাইবার কূটনীতির ব্যবহার বাড়ছে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভবিষ্যতের উপর এর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। জাতিসমূহ অধিকতর আন্তঃসংযুক্ত বিধায় সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিজেদের মধ্যে সহযোগিতার নতুন উপায় খুঁজে বের করতে হবে। আর এই ডিজিটাল যুগে শান্তি স্থায়ী করতে সাইবার কূটনীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সাইবার কূটনীতি ব্যবহারের বেশকিছু সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, সাইবার কূটনীতি যোগাযোগের সরাসরি এবং তাৎক্ষণিক উপায়ের অনুমতি প্রদান করে। যদি প্রচলিত কূটনীতি চ্যানেল ধীর গতির হয়ে পড়ে অথবা অপ্রাপ্য হয় তখন সাইবার কূটনীতি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন দেশের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় সহায়তা করতে সাইবার কূটনীতি ব্যবহৃত হতে পারে। আর জনগণ ও তাদের চিন্তাধারার সাথে সংযোগ স্থাপন করার ক্ষেত্রে ডিজিটাল সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে রাষ্ট্রসমূহ নিজেদের সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করতে পারে এবং উদ্ভাবনী সমাধান বের করতে পারে।
সবশেষে, সাইবার কূটনীতি বৃহৎ ও ক্ষুদ্র রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরিতে সাহায্য করতে পারে। ইন্টারনেট ছোট রাষ্ট্রগুলোকে নিজেদের অবস্থানের আরো উচ্চতায় তুলে ধরার সক্ষমতা প্রদান করেছে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে।
সাইবার কূটনীতির বিভিন্ন সুবিধা থাকলেও এর বেশকিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে যা বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। প্রথমত, ডিজিটাল সরঞ্জামাদির ব্যবহার নতুন করে নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে কেননা স্পর্শকাতর তথ্য সহজেই আপস করা যায়।
দ্বিতীয়ত, গতি এবং সাইবার কূটনীতির তথ্য কখনও কখনও ভুল বোঝাবুঝি এবং ভুল যোগাযোগের সৃষ্টি করতে পরে। এই অবস্থা রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি এবং সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে।
সবশেষে, ডিজিটাল সরঞ্জামাদির ব্যবহার সাইবার
যুদ্ধের মত নতুন ধরণের সংঘাত বাড়িয়ে দিতে পারে।পৃথিবীর প্রায় সবদেশ আজ ডিজিটাল অবকাঠামোর উপর নির্ভরশীল বিধায় আক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে যা পুরো অর্থনীতিকেই পঙ্গু করে দিতে পারে।
ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও সাইবার কূটনীতি এখন থাকবেই। পুরো বিশ্ব আজ ধীরে ধীরে আন্তঃসংযুক্ত বিধায় দেশগুলোকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকতে নতুন উপায় খুঁজে বের করতে হবে। দেশগুলোর মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারে সাইবার কূটনীতি অনন্য সুযোগ প্রদান করে থাকে।
গত এক দশকে সাইবার কূটনীতির রাজত্বে বড় ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। সারাবিশ্বে শুধুমাত্র এই দেশটিরই কতিপয় সবচেয়ে উন্নত সাইবার সক্ষমতা রয়েছে বিধায় এটা ব্যাপকভাবে সম্ভব হয়েছে। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্নভাবে তার বিদেশ নীতির লক্ষ্যগুলো এগিয়ে নিতে দেশটির সাইবার সক্ষমতাকে ব্যবহার করেছে।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হচ্ছে ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরানের নাতাঞ্জের পরমানু সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা ধ্বংসের উদ্দেশ্যে পরিচালিত অপারেশন। "অলিম্পিক গেমস " নামে অভিহিত ওই অপারেশনে ইরানের ওই স্থাপনায় নাশকতা চালাতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা স্টাক্সনেট নামের একটি দূষিত সফটওয়্যার ব্যবহার করে। ওই অপারেশন সফল হয়েছিল বলে ব্যাপকভাবে বিবেচনা করা হয় এবং কূটনৈতিক উদ্দেশ্যে সাইবার সক্ষমতা ব্যবহারে যুক্তরাষ্ট্রের সক্ষমতা উদাহরণস্বরূপ হয়।
সম্প্রতি ইসলামিক স্টেইট গ্রুপকে লক্ষবস্তু করতেও যুক্তরাষ্ট্র তার সাইবার সক্ষমতা ব্যবহার করেছে। গত ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র এই গ্রুপের বিরুদ্ধে একের পর এক সাইবার আক্রমণ চালিয়েছে যার ফলে গ্রুপটির কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং বহু তথ্য ছিনতাই করা হয়। ওই আক্রমণকেও ব্যাপকভাবে সফল হিসেবে দেখা হয় এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সক্ষমতা ব্যবহারে দেশটি তার অঙ্গীকার প্রদর্শন করেছে।
এ বিষয়টি পরিষ্কার যে যুক্তরাষ্ট্র আগামীতেও সাইবার কূটনীতিতে প্রধান ভূমিকা পালন অব্যাহত রাখবে। দেশটির বিশাল সাইবার সক্ষমতা সারা বিশ্বের ঘটনাসমূহে প্রভাব বিস্তারে "অনন্য সামর্থ" প্রদান করেছে এবং মনে হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র তার বৈদেশিক নীতির লক্ষসমূহ এগিয়ে নিতে এসকল সক্ষমতার ব্যবহার অব্যাহত রাখবে।
(সূত্র: ফলো.ইট অনলাইন অবলম্বনে)
Comments