বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অহিংস, শান্তিপূর্ণ এবং নিরপেক্ষ হবার প্রত্যাশায় রয়েছে জাপানের।
আজ সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এবং ফ্রেডরিক-এবার্ট-স্টিফটুং, বাংলাদেশ (এফইএস, বাংলাদেশ)-এর যৌথ আয়োজনে “মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর” সিরিজ শীর্ষক অনুষ্ঠানে একথা বলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপা্নের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি ।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছেন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)- এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।
তিন পর্বের এ অনুষ্ঠানের প্রথম অংশে ছিল রাষ্ট্রদূতের বক্তৃতা, দ্বিতীয় অংশে রাষ্ট্রদূতের সাথে একটি আলোচনা পর্ব- যেখানে সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনুষ্ঠানের শেষ অংশে ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব, যেখানে আমন্ত্রিত সাংবাদিকরা সরাসরি রাষ্ট্রদূতের সাথে কথা বলেছেন। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদরাও আলোচনায় অংশ নিয়েছেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সিজিএস- এর চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী দুই দেশের পারস্পরিক সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, জাপানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক গভীর এবং বন্ধুত্বপূর্ণ। এ সময় তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জাপানের নাগরিকদের অবদানের কথা তুলে ধরেন। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ এবং জাপানের এই ধরনের সাহায্য-সহযোগিতার সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হবে বলে, তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আলোচনা বক্তব্যে ফ্রেডরিক-এবার্ট-স্টিফটুং, বাংলাদেশ (এফইএস, বাংলাদেশ) এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সাধন কুমার দাস বাংলাদেশ- জাপানের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক সাহায্য- সহযোগিতার নানা দিক তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি তাঁর বক্তব্যে বলেন, জাপান বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন অংশীদার। তিনি মানব সম্পদ উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন যে জাপান এক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষা ত্বরান্বিতকরণ, নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠা, যুবকদের দক্ষতা উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে সাহায্য করছে। চলতি বছরের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, এই সময় বাংলাদেশ-জাপান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ( ফ্রী ট্রেড এগ্রিমেন্ট-এফটিএ) নিয়ে কাজ করবে যা দুই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাপান এবং বাংলাদেশের মধ্যকার সামরিক এবং নিরাপত্তার সুসম্পর্কে্র কথাও তিনি তুলে ধরেন। বাংলাদেশে জাপানী কোম্পানীগুলোর বিনিয়োগের জন্য আড়াইহাজার উপজেলায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এর সুবিধা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বলে তিনি আরো বলেন যে, ভারতের পর জাপান হলো বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানীকারক দেশ, এই সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরো জোরদার হবে।
বক্তব্যে ই্তো নাওকি আরো বলেন যে, বাংলাদেশের অবকাঠা্মোগত উন্নয়নে জাপান গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। বিশেষ করে জাপান বাংলাদেশে কয়ালাচালিত মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল, মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে যা বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশেষভাবে সাহায্য করছে।এছাড়াও তিনি শুল্ক হ্রাস, জিএসপি সুবিধা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়েও কথা বলেছেন।
বাংলাদেশ-জাপান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি সম্পর্কে তিনি বলেন যে, এই ধরণের চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে নতুন পরিকল্পনা এবং কাঠামো তৈরি করতে হবে। সেক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং কোম্পানীগুলোর অংশগ্রহণের উপর তিনি জোর দিয়েছেন।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট নিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, জাপান সরকার মিয়ানমারের সামরিক সরকারের সাথে এই ব্যাপারে আলোচনা করার চেষ্টা করছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন যে, মিয়ানমারে তারা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রর্ত্যাবাসনের পক্ষে এবং অন্যান্য বেসরকারি ও উন্নয়ন অংশীদারদের মতো জাপানও রোহিঙ্গাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সাহায্য করে যাচ্ছে। তবে মিয়ানমারের শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন এবং রোহিঙ্গাদের দক্ষতার উন্নয়ন ছাড়া এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়, বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন এর জন্য নির্বাচন কমিশন এবং সরকার কাজ করছে। আগামী নির্বাচন পূর্বের তুলনায় সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি আরও বলেন যে, নির্বাচনে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণ করবে। বাংলাদেশে ভোটার শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ প্রদান করার ক্ষেত্রে অর্থায়ন এর ব্যাপারে তিনি সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করেছেন এবং এ ব্যাপারে তিনি জাপান সরকারের সাথে আলোচনা করবেন বলে তিনি মতবাদ ব্যক্ত করেছেন।
জাপানে বাংলাদেশের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল সৈয়দ ম ইব্রাহীম (অবঃ), শামা ওবায়েদ ( বিএনপি), লেঃ জেনারেল আমিনুল করিম, ফায়য়াজুল হক রাজু, ড জামাল উদ্দীন, ড সরদার নাঈম এবং প্রমুখ।
Comments