সোমবার, ০২ অক্টোবর, ২০২৩

ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা ঘোষণা করলো বাংলাদেশ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক
|  ২৪ এপ্রিল ২০২৩, ২০:০২

ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিরোধপূর্ণ অবস্থানকে বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ তার ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখায় এই অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট সবার সমৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি অবাধ, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিকের ধারণা বাস্তবায়নের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেছে।

সোমবার (২৪ এপ্রিল) পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। এ সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন।

শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের সবসময় জিজ্ঞাসা করা হয় এবং আজকে আমরা এটি আপনাদের জানাচ্ছি। পরে এটি আমাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে।

ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছে বাংলাদেশ এবং প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলো সতর্কতার সঙ্গে পরিহার করেছে। রূপরেখা ঘোষণার মাধ্যমে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানগত যে শূন্যতা ছিল, সেটি পূরণ করা হলো।

ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের যতটুকু নিরাপত্তা উপাদান থাকা প্রয়োজন, ততটুকুকে গুরুত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ। সামরিক বিষয়াদির বিষয়ে কোনও ধরনের মন্তব্য করা হয়নি রূপরেখায়।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পরে এটি প্রকাশ করলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই রূপরেখা নিয়ে অনেক দিন ধরেই কাজ করা হচ্ছিল। গত বছর প্রায় ১৪ পৃষ্ঠার একটি আউটলুক তৈরি করা হয়েছিল, যা পরবর্তীকালে আর গ্রহণ করা হয়নি।

বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখার তিনটি অংশ। প্রথমটি মুখবন্ধ (প্রিএম্বল), দ্বিতীয় অংশ গাইডিং প্রিন্সিপ্যাল এবং তৃতীয় অংশে রূপরেখার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের পর দেড় পাতার ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা সবার কাছে প্রকাশ করলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

রূপরেখার মুখবন্ধে বলা হয়েছে—বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী দেশ। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধিকে বাংলাদেশ তার উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করে।

রূপরেখায় বলা হয়, বাংলাদেশ তাই এ অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট সবার সমৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি অবাধ, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিকের ধারণা বাস্তবায়নের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে।

রূপরেখার চারটি মৌলিক নীতিমালা রয়েছে। প্রথম নীতিমালা হচ্ছে—জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্র নীতির মূলমন্ত্র ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’।

দ্বিতীয় মৌলিক নীতিমালা হচ্ছে—বাংলাদেশ সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদ, যেখানে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সমতার প্রতি শ্রদ্ধা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অন্যান্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান, আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের সনদে বর্ণিত নীতিগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তিপ্রয়োগ পরিহার, সাধারণ ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের জন্য অবিরাম প্রয়াস অব্যাহত রাখা।

তৃতীয় নীতিমালা হচ্ছে— সমুদ্র আইন সংক্রান্ত জাতিসংঘ সনদ বা আনক্লস, ১৯৮২-সহ প্রযোজ্য জাতিসংঘ চুক্তিগুলো এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক কনভেনশনগুলো মেনে চলা।

সর্বশেষ নীতিমালা হচ্ছে—টেকসই উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, মানবিক কার্যক্রম এবং মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে গঠনমূলক আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত